বিজ্ঞাপন
বৃহষ্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সদর উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এসসিজিজিপি প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত এ সংলাপে উপস্থাপিত গবেষণা, সামাজিক নিরীক্ষা ও জরিপে দেখা যায়—উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ুর প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর কারণে মানুষের জীবন–জীবিকা ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
সংলাপে জানানো হয়, বরগুনার উপকূল অঞ্চলের ৮৭.৪ শতাংশ মানুষ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির মুখোমুখি। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাকে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ৪২.৮ শতাংশ নাগরিক। জলবায়ুজনিত উদ্বেগে ভুগছেন ৬৭.৩ শতাংশ এবং ৬.৯ শতাংশ পরিবার ইতোমধ্যে স্থানচ্যুত হয়েছেন।
মূল প্রবন্ধে প্রকল্প কর্মকর্তা আফজাল হোসেন লাভলু জানান, বরগুনার মানুষের আয়ে সংকট প্রকট হয়ে উঠছে; ৮২.১ শতাংশ পরিবার মাসে ১০ হাজার টাকার কম আয় করেন। কৃষক, জেলে, দিনমজুর ও নারী–নির্ভর পরিবার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সেবাপ্রাপ্তিতেও রয়েছে বৈষম্য ২৩.৬ শতাংশ নাগরিক মনে করেন রাজনৈতিক অনুকূলতা ছাড়া অনেক সেবা পাওয়া যায় না। ৪৮.৮ শতাংশ আত্মীয়তাবাদকে এবং ২৪.৪ শতাংশ রাজনৈতিক প্রভাবকে সেবা প্রদানের প্রধান বাধা হিসেবে দেখেছেন। অভিযোগ ব্যবস্থাও দুর্বল; মাত্র ৩.৬ শতাংশ কোনোদিন অভিযোগ জানিয়েছেন। এছাড়া ৭৫ শতাংশ মতামতদাতা মনে করেন ইউনিয়ন পরিষদ সেবা প্রদানে নিরপেক্ষ নয়।
সংলাপের প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিফাত বিন সাদিক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক সংকট হলেও এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে উপকূলীয় মানুষের। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পারস্পরিক সহযোগিতা ছাড়া বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সিভিক ফোরামের সভাপতি মোশারফ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিক ফোরামের সভাপতি জাকির হোসেন মিরাজ, বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সালেহ, রেডিও লোকবেতারের পরিচালক মনির হোসেন কামাল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা।
নারী, যুব, জেলে, কৃষক এবং জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সেবা প্রাপ্তির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি তাঁদের সীমাবদ্ধতা ও সম্ভাবনার কথা জানান। আলোচনা পরিচালনা করেন তারেক বিন আনসারি।
সংলাপ শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আটটি ইউনিয়নের জন্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদান করেন। উপকরণগুলোর মধ্যে ছিল সেফটি গ্লাভস, সেফটি ভেস্ট, লাইফ জ্যাকেট, কুঠার, টর্চলাইট, ফার্স্ট এইড বক্স, গামবুট, হ্যান্ড মাইকসহ মোট ১৯ ধরনের সরঞ্জাম। এর আগে উপকরণ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পরিষদ এবং ওয়েব ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
নলটোনা, বরগুনা সদর, আয়লা পাতাকাটা, বুড়িরচর, এম বালিয়াতলী, কেওড়াবুনিয়া, আইলা পাতাকাটা ও ঢলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিবরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে এসব উপকরণ গ্রহণ করেন।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি ও দুর্বল সুশাসন একে অপরকে আরও প্রকট করে তুলছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, নারীর অংশগ্রহণ ও শক্তিশালী দুর্যোগ প্রস্তুতিই উপকূলীয় মানুষের জীবনমান উন্নয়নের একমাত্র পথ।
তাঁরা আরও বলেন, নাগরিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলে জলবায়ু সহনশীল উন্নয়ন কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...