বিজ্ঞাপন
২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত (২৪ ডিসেম্বর) আনুমানিক ৩টার দিকে তিনতলা বিশিষ্ট লঞ্চ ‘অভিযান-১০’ ঝালকাঠি সদর উপজেলার দিয়াকুল গ্রাম সংলগ্ন সুগন্ধা নদী অতিক্রম করছিল। সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় লঞ্চটিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। হঠাৎ ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং মুহূর্তেই তা পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন যাত্রীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখার কবলে পড়েন। জীবন বাঁচাতে অনেকেই কনকনে শীতের রাতে নদীতে ঝাঁপ দেন। এই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫০ জন যাত্রী দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান এবং শতাধিক যাত্রী ও লঞ্চ স্টাফ গুরুতর আহত হন। নিহতদের সিংহভাগই ছিলেন বরগুনা জেলার বাসিন্দা।
দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দা, ফায়ার সার্ভিস, রেড ক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার কাজে নামেন। ভোরের আলো ফুটতেই সুগন্ধার পাড়ে একে একে ভেসে উঠতে থাকে পোড়া মরদেহ। ঝালকাঠি লঞ্চঘাট, দিয়াকুলের চর আর হাসপাতালের মর্গে স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও ঝালকাঠি ও বরগুনার মানুষের মনে ক্ষতের মতো জেগে আছে।
সুগন্ধা ট্রাজেডির পর নৌপথে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝালকাঠিতে একটি স্থায়ী নৌ ফায়ার স্টেশন নির্মাণের জোর দাবি ওঠে। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠালেও গত চার বছরে তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও অগ্নি-দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "যদি 'অভিযান-১০' দুর্ঘটনার পরপরই নৌ ফায়ার স্টেশনটি নির্মিত হতো, তবে ভবিষ্যতে বড় কোনো দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব হতো। কিন্তু চার বছর ধরে এই দাবি কেবল ফাইলবন্দি হয়েই আছে।"
প্রতি বছর ২৪ ডিসেম্বর এলেই সুগন্ধার পাড়ে জড়ো হন অনেক স্বজনহারা মানুষ। কারো মা, কারো সন্তান, আবার কারো পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে সেই আগুনে। চার বছর পর আজও বিচার আর নিরাপত্তার আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা। কিন্তু সুগন্ধার ঢেউয়ের মতো তাদের চোখের জলও যেন থামার নয়।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...