ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
কুরআন ও হাদীসে বন্ধুর প্রভাব কতটা শক্তিশালী হতে পারে—তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। একজন মানুষ যার সঙ্গে সময় কাটায়, দীর্ঘমেয়াদে তার চিন্তা, আচরণ ও বিশ্বাস তার জীবনে প্রভাব ফেলে। এ কারণেই ইসলাম বন্ধু নির্বাচনে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “সেদিন (কিয়ামতের দিন) বন্ধুরা একে অপরের শত্রু হয়ে যাবে, তবে মুত্তাকিরা ব্যতিক্রম।” (সূরা যুখরুফ: ৬৭)। এই আয়াতে বোঝা যায়, পরকালীন পরিণতিতেও বন্ধুত্বের প্রভাব থাকবে। হাদীসে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “মানুষ তার বন্ধুদের দ্বীনের ওপর থাকে। কাজেই তোমাদের কেউ যেন দেখে, সে কাকে বন্ধু বানাচ্ছে।” (তিরমিজি)। অর্থাৎ বন্ধু নির্বাচন মানেই হচ্ছে নিজের বিশ্বাস ও চরিত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ।
ভালো বন্ধুর গুণাবলির মধ্যে অন্যতম হলো—তার সাহচর্যে আল্লাহর কথা মনে পড়ে, সে নামাজি, দীনদার ও সদা সত্যবাদী। এমন বন্ধু আপনাকে ভালো কাজে উৎসাহ দেবে এবং গুনাহের পথে গেলে সতর্ক করবে। রাসুলুল্লাহ ﷺ ভালো বন্ধুর দৃষ্টান্ত দিয়েছেন আতর বিক্রেতার মতো—যার সাহচর্যে আপনি উপকার পাবেন, যদি কিছু না-ও পান, অন্তত তার সুন্দর প্রভাব গ্রহণ করবেন। বিপরীতে, খারাপ বন্ধুদের উদাহরণ তিনি দিয়েছেন লোহার কামারের মতো—সে হয়তো আপনার কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেবে, না হয় তার খারাপ গন্ধে আপনি কষ্ট পাবেন।
ইসলাম বন্ধুত্ব গড়ার ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্যকে গুরুত্ব দেয় তা হলো—আল্লাহভীরু ও পরহেজগার হওয়া, সত্যবাদিতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা এবং ভালো কাজে সহযোগিতা করা। শুধু বাহ্যিক হাসিমুখ আর সময় কাটানোই বন্ধুত্ব নয়; বরং এমন বন্ধু চাই, যে আপনাকে জান্নাতের পথে আগাতে সাহায্য করবে।
অন্যদিকে, ইসলাম এমন সঙ্গ থেকে দূরে থাকতে বলেছে যারা অশ্লীলতা, পাপাচার, অহংকার ও দুনিয়ামুখী প্রবণতায় লিপ্ত। নামাজ পরিত্যাগকারী, দ্বীন থেকে গাফিল, মুনাফিক বা চরিত্রগতভাবে সন্দেহজনক ব্যক্তি কখনো ভালো বন্ধু হতে পারে না। কারণ এদের সাহচর্যে একজন মুমিনের ঈমান ও নৈতিকতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
বন্ধু নির্বাচন তাই নিছক এক সামাজিক বাছাই নয়, বরং এটি এক ঈমানি দায়িত্ব। ইসলাম চায়, একজন মুমিন এমন বন্ধু বেছে নিক, যার সঙ্গ আখিরাতেও তাকে উপকারে আসবে। যে বন্ধু আজ দুনিয়ায় হাসিমুখে পাশে আছে, সে যদি আল্লাহর অবাধ্য পথে ডেকে নেয়—তবে সে বন্ধুত্ব ক্ষতির কারণ ছাড়া কিছু নয়। এজন্যই ইসলাম বলে, “ভেবে চিন্তে বন্ধু নির্বাচন করো।” কারণ সঙ্গী হতে পারে আপনার জান্নাতের সাথি, আবার হতে পারে জাহান্নামের সঙ্গী।