মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান। ছবি : সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমান ও সাবমেরিন থেকে চালানো এই হামলায় ব্যবহৃত হয়েছে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের বাংকারবিধ্বংসী বোমা।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে বি-২ বোমারু বিমানগুলো। টানা প্রায় ৩৭ ঘণ্টা আকাশপথে উড়ে ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেওয়া বিমানগুলো মাঝ আকাশেই একাধিকবার জ্বালানি নেয়।
হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক কেন্দ্র। সূত্র জানায়, ৬টি বি-২ বোমারু বিমান ফর্দো স্থাপনাটিতে মোট এক ডজন জিবিইউ-৫৭ বোমা ফেলেছে, যেগুলোর প্রতিটির ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড। এই ‘মাদার অব অল বাংকার বম্বস’ নামে পরিচিত বোমাগুলো গভীর ভূগর্ভে অবস্থিত সুরক্ষিত স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম।
এ ছাড়া মার্কিন নৌবাহিনীর একটি সাবমেরিন থেকে ইরানের নাতাঞ্জ ও ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় ছোড়া হয় ৩০টি টিএলএএম (Tomahawk Land Attack Missile) ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। একইসঙ্গে একটি বি-২ বিমান নাতাঞ্জ কেন্দ্রে আরও দুটি বাংকারবিধ্বংসী বোমা নিক্ষেপ করে।
হামলার পর হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশন ভাষণ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, “ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যদি ইরান কূটনৈতিক পথে ফিরে না আসে, তবে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “ইরান যে পারমাণবিক হুমকি তৈরি করেছে, তা বন্ধ করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই পদক্ষেপ আমেরিকা ও বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরান সরকার। তবে তেহরান দাবি করেছে, “যুক্তরাষ্ট্র যেসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে, সেগুলো আগেই খালি করা হয়েছিল। ফলে সেখানে এমন কিছু ছিল না, যা বিকিরণ সৃষ্টি করে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারত।”
ইরানের সরকারি মুখপাত্র আরও বলেন, “এই হামলা ছিল আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। ইরান উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দিতে প্রস্তুত রয়েছে।”
এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সংঘাত নিরসনে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই যুদ্ধ থামানোর সংকেত দেয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই সরাসরি সামরিক পদক্ষেপ ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের সবচেয়ে ভয়াবহ পর্বের সূচনা করতে পারে। একইসঙ্গে এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নতুন করে ঝুঁকিতে ফেলেছে।