ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাতে সমর্থকদের উদ্দেশে দেয়া এক আবেগঘন বক্তব্যে তিনি বলেন, “আজ রাতে আমরা ইতিহাস গড়েছি।”
প্রতিদ্বন্দ্বী ও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো নিজেই পরাজয় স্বীকার করে মমদানিকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কুওমো বলেন, “আজ রাত তার, সে জিতেছে।” এই নির্বাচন কেবল একজন প্রার্থী নির্বাচনের সীমায় আবদ্ধ ছিল না; বরং এটি ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশনাও স্পষ্ট করেছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগে পদত্যাগ করা সাবেক গভর্নর কুওমো রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছিলেন। তবে মমদানির আকস্মিক ও প্রবল উত্থান সেই পথকে কার্যত রুদ্ধ করে দিয়েছে।
যদিও চূড়ান্ত ফলাফল আসতে এখনও ‘র্যাঙ্কড চয়েস’ পদ্ধতির গণনা চলছে, তবে প্রথম পছন্দের ভোটেই মমদানি বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনী বোর্ড জানিয়েছে, দুই লাখেরও বেশি ভোটার কেবল একজন প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন—যার অর্থ, মমদানির কাছেই বিজয়ের চাবিকাঠি।
অসম্ভবকে সম্ভব করার এক অধ্যায়
মাত্র এক বছর আগেও রাজনৈতিক বৃত্তের বাইরে থাকা জোহরান মমদানি আজ নিউইয়র্ক শহরের আলোচিত নাম। তার প্রচারণার পোস্টার ছেয়ে গেছে দোকানপাট, রাস্তাঘাট ও বিলবোর্ডে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ভিডিও ছিল সর্বত্র। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, “ফ্রি বাস, ফ্রি চাইল্ড কেয়ার, সাশ্রয়ী আবাসন, উচ্চতর ন্যূনতম মজুরি—সবকিছুই ধনীদের ওপর নতুন কর বসিয়ে সম্ভব।”
বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পান তিনি। ব্রুকলিনের কেন্দ্রে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উৎসবমুখর পরিবেশে নাচছিলেন তার স্বেচ্ছাসেবকরা। এক স্থানীয় তরুণী বলেন, “শহরটা আবার বেঁচে উঠেছে। এটা একটা বিদ্যুৎ ছড়ানো অনুভূতি।”
ভাষণে মমদানি বলেন, “নেলসন ম্যান্ডেলার ভাষায়, এটি সবসময় অসম্ভবই মনে হয়—যতক্ষণ না তা বাস্তবে ঘটে। আমরা করে দেখিয়েছি।”
কুওমোর আত্মসমর্পণ ও রাজনীতির ব্যর্থ প্রত্যাবর্তন
৬৭ বছর বয়সি অ্যান্ড্রু কুওমো দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, পরিচিতি ও রাজনৈতিক তহবিল নিয়েও মমদানির তরঙ্গ থামাতে পারেননি। বিতর্কে তার তীব্র সমালোচনার জবাবে মমদানি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন, “মিস্টার কুওমো, আমাকে কখনও লজ্জাজনকভাবে পদত্যাগ করতে হয়নি।”
২০১৮ সালে গভর্নর হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা কুওমো যৌন হয়রানির একাধিক অভিযোগের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হন এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সেই থেকে তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের পথ কণ্টকাকীর্ণ ছিল।
ডেমোক্রেটদের ভবিষ্যতের মুখ
এই নির্বাচন একপ্রকারে মার্কিন রাজনীতিতে প্রগতিশীল ডেমোক্রেটদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। কুওমোর অভিজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠানপন্থী ধারা এবং মমদানির তরুণ-নির্ভর নতুন ঢেউ—এই দুই মেরুর সংঘর্ষেই গড়ে উঠেছে এক নতুন রাজনীতির আখ্যান। জোহরান মমদানি হতে যাচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল অংশ ইতোমধ্যেই এই জয়কে একটি নতুন যুগের সূচনাবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করছে। তাদের আশা, এই তরুণ নেতার নেতৃত্বে নিউইয়র্ক ও সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে এক নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হতে চলেছে।