Logo Logo
দূনীতি

কৃষি প্রণোদনায় দুর্নীতির অভিযোগ, সরকারি বীজ-সার থেকে বঞ্চিত প্রান্তিক চাষিরা


Splash Image

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির বরাদ্দ থাকলেও অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষক তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে।


বিজ্ঞাপন


কৃষি প্রণোদনার ক্ষেত্রে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারণে চরম ক্ষোভে ফুঁসছেন রাজাপুরের প্রকৃত কৃষকরা।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রাজাপুর উপজেলার ৪২০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে উফশী আমন ধানের বীজ ও সার, ১২০ জনকে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির বীজ, ১৮০ জনকে লেবুর চারা, ১৩০ জনকে আমের চারা এবং ৫০০ কৃষক ও ১২০টি প্রতিষ্ঠানে নারিকেল চারা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, ৬৪টি কৃষক সংগঠনের জন্য তাল চারা এবং ১ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ফলদ গাছের চারা বিতরণের কথা রয়েছে।

কাগজে বরাদ্দ, মাঠে হাহাকার

উপজেলা কৃষি অফিসের এই ঘোষিত বরাদ্দ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে। অনেক প্রান্তিক কৃষক জানান, তারা একাধিকবার কৃষি অফিসে গেলেও কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি।

প্রান্তিক কৃষক সাইদুর রহমান, কামাল হোসেন, সোহরাব হোসেন ও মোকসেদ আলী হাওলাদার বলেন, “প্রতি বছর কাগজে-কলমে দেখি সরকার বীজ, সার, চারা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কিছুই পাই না। কৃষি অফিসে গেলে বলে—‘নাই’ বা ‘কোটার বাইরে’।”

তারা আরও জানান, তারা ৫-৮ বিঘা জমিতে আমন ধান ছাড়াও রবি শস্য, শাকসবজি, ডাল, তরমুজ, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। কিন্তু কৃষি অফিস কখনও পরিদর্শনে আসে না, এমনকি পরামর্শ দিতেও আগ্রহ দেখায় না।

বিষয়টি জানতে চাইলে রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা. শাহিদা শারমিন আফরোজ কোনো ভিডিও বা মৌখিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর এই নিরবতা ও এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা পরিস্থিতিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

"আমরা বঞ্চিত, সুবিধা পাচ্ছে প্রভাবশালীরা"

কৃষকরা বলছেন, “সরকার যদি সত্যিই কৃষকের জন্য এই প্রণোদনা দেয়, তাহলে সেটা আমরা কোথায় পাচ্ছি না? এটা কি মাঝপথে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, না কি রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা সব নিয়ে নিচ্ছে?”

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ—প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে এসব উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে। কেউ কেউ আবার নিজে কৃষক না হয়েও বরাদ্দ নিচ্ছেন। আর যারা মাঠে ফসল ফলান, তারা সার-বীজের অভাবে চাষ করতে গিয়ে লোকসানে পড়ছেন।

প্রান্তিক কৃষকরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, “আমরা দিনরাত কষ্ট করে মাঠে কাজ করি। অথচ আমাদের প্রাপ্যটুকু না পেয়ে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী তা নিয়ে যায়। এই দুর্নীতির তদন্ত ও বিচার চাই।”

স্বচ্ছতা ছাড়া সফলতা নয়

স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, কৃষি প্রণোদনা বিতরণে তালিকা প্রণয়ন, উপকারভোগী যাচাই ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বচ্ছতা না থাকলে প্রকৃত চাষিরা কখনোই সরকারি সহযোগিতা পাবেন না। এতে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি কৃষিখাতেও পড়বে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।

-মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি

আরও পড়ুন

গৃহবধূ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি
গৃহবধূ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অংশীজনদের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অংশীজনদের মধ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত