ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধবিরতির দুই দিন পর বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) নীরবতা ভাঙলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এক্স (সাবেক টুইটার) এবং জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া বার্তায় তিনি ঘোষণা করেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংঘাতে ইরান বিজয়ী হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে খামেনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করেছে কারণ তারা মনে করেছিল যে যদি তা না হয়, তাহলে ইহুদিবাদী শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।” তিনি আরও লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় দিয়েছে।”
পরবর্তীতে জাতির উদ্দেশে প্রচারিত টেলিভিশন ভাষণে খামেনি বলেন, “আমি মিথ্যাচারী জায়নবাদী শাসনের ওপর বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানাই। সব হৈচৈ আর দাবির মধ্যে, জায়নবাদী শাসনব্যবস্থা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইসলামিক রিপাবলিকের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মার্কিন শাসনের ওপর আমাদের প্রিয় ইরানের বিজয়ের জন্য অভিনন্দন। মার্কিন শাসন সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল, কারণ তারা মনে করেছিল, যদি তা না করে, তাহলে জায়নবাদী শাসন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা সেই শাসনকে বাঁচাতে যুদ্ধে প্রবেশ করেছিল, কিন্তু কিছুই অর্জন করতে পারেনি।”
খামেনির ভাষ্য অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদ। “ইসলামিক রিপাবলিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখে একটি কঠিন চপেটাঘাত করেছে। ইরান আল-উদেইদ এয়ার বেসে আক্রমণ করেছে এবং উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করেছে, যা এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি,” বলেন তিনি।
সর্বোচ্চ নেতা আরও উল্লেখ করেন, “ইসলামিক রিপাবলিকের পক্ষে এই অঞ্চলের মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকা এবং যখনই প্রয়োজন মনে করবে তখনই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। যদি কোনো আগ্রাসন সংঘটিত হয়, তবে শত্রুপক্ষকে অবশ্যই ভারী মূল্য দিতে হবে।”
গত ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আকস্মিক বিমান হামলার মাধ্যমে সামরিক অভিযান শুরু করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব দেয়। এরপর থেকে টানা কয়েক দিন ধরে উভয় পক্ষ একে অপরের অবস্থানে পাল্টাপাল্টি হামলা চালায়।
সংঘাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে ২২ জুন ভোরে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ঠিক পরদিন, ২৩ জুন সন্ধ্যায়, ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আল-উদেইদে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
২৪ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। ট্রাম্প ঘোষণা দেন, “উভয় পক্ষ একটি সম্মতিতে পৌঁছেছে।” এর পরপরই ইসরায়েল জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তবে তেহরানের ভাষ্য ছিল ভিন্ন—তারা দাবি করে, “তেল আবিবকে আগ্রাসন থামাতে বাধ্য করে বিজয় অর্জন করেছে।”