বিজ্ঞাপন
সোমবার (৩০ জুন) রাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এসব তথ্য জানিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এ হামলা চালানো হয়। শুধুমাত্র উত্তর গাজার সমুদ্রতীরবর্তী একটি ক্যাফে—আল-বাকা’তে হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ৩৯ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে একটি শিশুর জন্মদিন উপলক্ষে নারী-পুরুষ ও শিশুরা জড়ো হয়েছিলেন। সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাবও ওই হামলায় নিহত হন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরিফ বলেন, “কোনো ধরনের পূর্বসতর্কতা ছাড়া বিমান থেকে বোমা ফেলা হয়। জায়গাটির কোনো সামরিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। আমরা ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি। শুধু একটি শিশুর জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছিল এখানে।”
এছাড়া গাজা শহরের ইয়াফা স্কুলেও আশ্রয় নেওয়া কয়েকশ বাস্তুচ্যুত মানুষের ওপর চালানো হয় হামলা। হামাদা আবু জারাদে নামের একজন বলেন, “হামলার মাত্র পাঁচ মিনিট আগে আমাদের সরে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা কোথায় যাবো, সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ৬৩০ দিনেরও বেশি সময় ধরে আমরা বাঁচার লড়াই করছি।”
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল চত্বরে চালানো হামলাতেও বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষ, যাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালাতে শুরু করেন। আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, “এই হাসপাতালে ইতিমধ্যে অন্তত ১০ বার হামলা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো গাজার ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও বিপর্যস্ত করছে।”
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে অবস্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন এবং আহত হয়েছেন ৫০ জন। এসব মানুষ শুধু খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। মে মাস থেকে এই ফাউন্ডেশন গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ বিতরণ শুরু করলে প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এখন পর্যন্ত এসব হামলায় ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সেনাবাহিনীকে প্রায়ই নিরস্ত্র ত্রাণপ্রার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনারা জানান, অনেক সময় কোনো হুমকি না থাকলেও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে বলা হয়।
এদিকে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের ভেতরে শরণার্থীদের জন্য স্থাপিত একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, গাজার স্বাস্থ্য খাতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এটি একটি পরিকল্পিত হামলা।