বিজ্ঞাপন
গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের সরকার ঘোষিত সামুদ্রিক মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই সমুদ্র অঞ্চলে একের পর এক নিম্নচাপ ও লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় মাছ ধরার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসেনি। ফলে ভর মৌসুমেও ফাঁকা হাতে ফিরতে হচ্ছে ট্রলারগুলোকে।
আলীপুর মৎস্য বন্দর ব্যবসায়ী আবুল হোসেন কাজী জানান, “৫৮ দিনের অবরোধ শেষ হতেই শুরু হয় দফায় দফায় নিম্নচাপ। যার ফলে বারবার সাগরে গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে। প্রতিটি ট্রলার সাগরে পাঠাতে কয়েক লাখ টাকার বাজার করতে হয়। কিন্তু সমুদ্রের এমন আচরণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ট্রলার মালিকরা।”
একই হতাশার কথা জানালেন মায়ের দোয়া বোটের মাঝি ইউসুফ। তিনি বলেন, “৫৮ দিনের অবরোধের পর এখন পর্যন্ত আমরা লাভের মুখ দেখিনি। আবহাওয়া খারাপ থাকায় দুই এক দিন মাছ ধরেই আবার ঘাটে ফিরতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো এই পেশা ছেড়ে দিতে হবে।”
আলিপুর মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি জলিল ঘরামী (মনি ফিস) বলেন, “গত চার বছরে আমরা ব্যবসার কোনো লাভ দেখিনি। শুধু লোকসান। লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়ে যদি এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়, তাহলে এ পেশা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
মহিপুর আড়ৎদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমন দাস জানান, “বাজারে ইলিশের দাম চড়াও থাকলেও, পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিলছে না। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সাগরে যেতে পারছে না, এতে আমরাও বিপাকে পড়ছি।”
এ বিষয়ে কথা বললে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্র বারবার খারাপ হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে—গভীর সমুদ্রে লম্বা জালে কিছু মাছ ধরা পড়লেও, অধিকাংশ ভাসান জাল, কালো কট বা লাল জালের জেলেরা তেমন ইলিশ পাচ্ছেন না। তবে আশা করছি, আবহাওয়া অনুকূলে এলে ইলিশের জোগান অনেকটা স্বাভাবিক হবে।”
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। আবার অনেকে দাদনের টাকায় বাধ্য হয়ে সমুদ্রে নামলেও লোকসান নিয়ে ফিরছেন বারবার।
প্রকৃতি ও পেশাগত অনিশ্চয়তা মিলিয়ে উপকূলের জেলেদের জীবন আজ চরম অনিশ্চয়তায় জর্জরিত। সামনে ভালো দিন আসবে, এমন প্রত্যাশা নিয়েই এখনো তারা তাকিয়ে আছেন সাগরের অনুকূলে ফিরার দিকে।
প্রতিবেদক - জাকারিয়া জাহিদ, কলাপাড়া, পটুয়াখালী।