Logo Logo

'পার্টনার ফিল্ড স্কুল’ বদলে দিচ্ছে নড়াইলের কৃষি চিত্র: জ্ঞানে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা


Splash Image

ছবি: সংগৃহীত।।


বিজ্ঞাপন


নড়াইল জেলার গ্রামীণ প্রান্তরে গড়ে উঠছে এক নতুন ধরণের শিক্ষাঙ্গন—যেখানে শিক্ষার্থীরা বইয়ের বদলে হাতে তুলে নিচ্ছেন কাস্তে, বীজ ও সার; কলমের জায়গায় চাষের কলাকৌশল। কেউ পঞ্চাশের কোঠায়, কেউ বা পঁইত্রিশ—তবে সবার চোখেই শেখার আগ্রহ, নিজের ভাগ্য বদলে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা।

এই অনন্য উদ্যোগ কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (PARTNER)’ প্রকল্পের অংশ। এ প্রকল্পের আওতায় নড়াইল সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল (PFS)’ ও কৃষক সেবা কেন্দ্র—যেখান থেকে কৃষক ও কৃষাণীরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশল।

প্রতি গ্রুপে ২৫ জন করে নারী-পুরুষ কৃষক-কৃষাণী অংশ নিচ্ছেন এই দশদিনব্যাপী ‘রবি প্রকল্প’ ভিত্তিক প্রশিক্ষণে। এদের প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা ভাতা ও নাস্তা সরবরাহ করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হয় একটি সনদপত্রও। এই সুযোগ পেয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা খুশি, আত্মবিশ্বাসী এবং আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষির প্রতি।

গত ২৯ জুলাই মঙ্গলবার সরেজমিন কালিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ রকম বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়। কালিয়া উপজেলার উড়সী গ্রামের স্থাপিত পার্টনার ফিল্ড স্কুল (PFS)-ধান ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের প্রশিক্ষনার্থী আজিজুল গাজী বলেন, “বাপদাদার আমল থেকে কৃষি কাজ করে আসছি। কিন্তু এই কেন্দ্রের মাধ্যমে আমরা নতুন অনেক কিছু শিখতে পারলাম। এখানে যা শিখেছি তা জমিতে ব্যবহার করতে অনেক উপকার হবে। তিনি আরো বলেন, কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইভা মল্লিক আপা নিয়মিত আমাদের এখানে এসে ক্লাসের খোজ খবর নিয়েছে। আমাদেরকে উদ্ধুত করেছেন।

একই স্কুলের প্রশিক্ষনার্থী শেফালী বেগম বলেন, আমরা এখান থেকে কৃষিকাজের সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা ১০টি ক্লাস করেছি। এর জন্য আমাদেরকে ২ হাজার টাকা দিয়েছে সরকার। আর সাথে নাস্তাও দিয়েছে। আমরা সবাই ঠিকঠাকমত টাকা ও নাস্তার পেয়েছি। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

কালিয়া উপজেলার বাঁকা গ্রামের স্থাপিত পার্টনার ফিল্ড স্কুল (PFS)-ধান ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের প্রশিক্ষনার্থী আছিয়া খানম বলেন, এই স্কুলের মাধ্যমে আমরা কীটনাশক, বালাই নাশক এর ব্যবহার শিখেছি। বীজ সংরক্ষণ করা শিখতে পেরেছি।

তিনি আরো বলেন, এই প্রশিক্ষণের সময় আমরা ২ হাজার করে টাকা পেয়েছি। একটা সনদপত্র ও নাস্তা পেয়েছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে।

কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক বলেন, কালিয়া উপজেলা গত জুনের ১৪টি স্কুলে কার্যক্রম ছিল। প্রতিটি স্কুলের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সঠিক ভাবে ভাতার টাকা ও নাস্তা প্রশিক্ষনার্থীদের কাছে পৌছে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের কৃষকদের নিয়ে সমবায় সমিতির গঠন করা হয়েছে। ব্যাংকে একাউন্ট খোলা হয়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পরবর্তী কাজ চলবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে কৃষক নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে পারবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য কৃষককে স্বাবলম্বী করা এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারবো।

নড়াইলের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জসিম উদ্দিন নড়াইল জেলার পাটনার ফিল্ড স্কুলের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে কলমে বীজ উৎপাদন, চাষবাসের আধুনিক কলাকৌশল শেখানো হয়। এ বিষয়টি কৃষকদের মাঝে ভালো সাড়া ফেলেছে।

তিনি আরো বলেন, এর অংশ হিসেবে কৃষক কৃষাণীরা সমবায় সমিতির মাধ্যমে সঞ্চয় করে কৃষিকাজের জন্য বিভিন্ন কাজ করে উদ্যোক্তা হতে পারছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...