Logo Logo

গাজায় দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরাও

গাজায় দুর্ভিক্ষ, বন্দিরা কঙ্কালসার—হামাসের নতুন প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত?


Splash Image

ছবি- সংগৃহীত

ইসরায়েলি বন্দিদের জন্য রেড ক্রসকে খাবার ও ওষুধ পাঠাতে অনুমতি দিতে রাজি হামাস। তবে গাজায় মানবিক সহায়তার করিডোর খুলে দেওয়ার শর্ত রেখেছে সংগঠনটি।


বিজ্ঞাপন


গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের জন্য খাবার ও ওষুধ পাঠাতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিকে (আইসিআরসি) অনুমতি দিতে রাজি হয়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তবে এই সম্মতি এসেছে শর্তসাপেক্ষে। এমন সময় এ ঘোষণা এল, যখন বন্দিদের দুর্দশার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং গাজায় লাখো ফিলিস্তিনি চরম দুর্ভিক্ষে দিন কাটাচ্ছেন। সূত্র: আল জাজিরা।

গত সপ্তাহে হামাসের হাতে আটক থাকা দুটি ইসরায়েলি বন্দির কঙ্কালসার দেহের ভিডিও ভাইরাল হয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৩ আগস্ট) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রেড ক্রসের কাছে গাজার বন্দিদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানান।

জবাবে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডসের মুখপাত্র আবু ওবাইদা বলেন, “বন্দিরা যা খাচ্ছে, আমাদের যোদ্ধারা ও জনগণও তাই খাচ্ছে।” তিনি জানান, গাজার জনগণ অবরোধ ও দুর্ভিক্ষে দিন পার করছে, তাই বন্দিদের জন্য আলাদা কোনো সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে মানবিক বিবেচনায়, “রেড ক্রস যদি খাবার ও ওষুধ দিতে চায়, আমরা তা ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করব।”

তবে হামাস এ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য দুটি শর্ত দেয়। প্রথমত, গাজার সকল অঞ্চলে মানবিক সহায়তার জন্য একটি স্থায়ী ও নিরাপদ করিডোর চালু করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সহায়তা পৌঁছানোর সময় ইসরায়েলি বিমান হামলা বন্ধ রাখতে হবে।

রোববার রেড ক্রস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা বন্দিদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার ভিডিও দেখে “মর্মাহত ও স্তব্ধ।” তাদের মতে, এই ভিডিওগুলো প্রমাণ করে বন্দিরা জীবনহানিকর অবস্থায় রয়েছে এবং দ্রুত সহায়তা প্রয়োজন।

রেড ক্রস আরও জানায়, ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের পর থেকে তারা আর কোনো ফিলিস্তিনি বন্দিকে ইসরায়েলি কারাগারে গিয়ে দেখতে পারেনি। একই দিনে তারা জানায়, দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস শহরের একটি ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (PRCS) স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে এক স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। যদিও রেড ক্রস এই হামলার জন্য সরাসরি কাউকে দায়ী করেনি, তবে PRCS দাবি করেছে এটি ইসরায়েলি বাহিনীর কাজ।

ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবার থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে নেতানিয়াহুর প্রতি। তারা বলেন, “সামরিক চাপে বন্দি মুক্তির কথা বলে ২২ মাস পার করা হয়েছে, কিন্তু কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। বরং সরকার এখন বলছে, চুক্তির গুরুত্বই নেই।”

এদিকে গাজার মিডিয়া অফিস জানায়, শনিবার (২ আগস্ট) গাজায় মাত্র ৩৬টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পেরেছে, যখন ২২,০০০ ট্রাক এখনো সীমান্তে আটকে রয়েছে। জাতিসংঘের মতে, বর্তমানে গাজায় ১০ লাখ নারী ও মেয়ে ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছেন এবং তাদের জীবন হুমকির মুখে।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ জনে, যার মধ্যে ৯৩ জনই শিশু। সর্বশেষ শনিবার ১৭ বছর বয়সী আতেফ আবু খাতের মৃত্যুবরণ করেছেন, যার মৃত্যুর সময় ওজন ছিল মাত্র ২৫ কেজি।

গাজায় যুদ্ধের পাশাপাশি দুর্ভিক্ষ ও অনাহারে সাধারণ মানুষের মৃত্যু যেন এক মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দিদের সহায়তা দেওয়ার এই প্রস্তাব অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—ইসরায়েল হামাসের শর্তে সাড়া দেবে কি না, এবং এই প্রক্রিয়া কতটা মানবিকভাবে এগোবে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...