বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে অভিযোগ ওঠে, পিটার হাস ঢাকায় এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন। তবে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৫ আগস্ট পিটার হাস যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনেই ছিলেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ‘দোলনচাঁপা’ ব্যবহারকারী যাত্রীদের কথিত তালিকা প্রথম ছড়ানো হয় ৬ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে। তালিকায় ৫ আগস্ট তারিখে পিটার হাসের নাম উল্লেখ করে দাবি করা হয়, তিনি এমিরেটস ইকে-৫৮৩ ফ্লাইটে করে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন।
‘Md Shahid Uddin Khan’ নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে বাংলা ভাষায় পোস্ট দিয়ে বলা হয়— “পিটার হাস আজ ০৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা ১৯:১০ মিনিটের সময় এমিরেটস ইকে ৫৮৩ ফ্লাইটে করে যাত্রা করার পূর্বে বাংলাদেশেই ছিলো। অথচ এনসিপি বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছে যে, পিটার হাস আমেরিকায় আছে; কি চরম মিথ্যাচার ও ভয়ংকর অবস্থা আমাদের গণমাধ্যমের, ছি!!”
এর আগে একটি টিভি চ্যানেল দাবি করে, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে এনসিপি নেতারা কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে ফেসবুক ও এক্স (টুইটার)-এর বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে একই দাবি ছড়িয়ে পড়ে।
এনসিপি নেতাদের কথিত বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগও তোলেন।
তবে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পিটার হাস ওই সময়ে ওয়াশিংটনেই ছিলেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা ৫ আগস্ট ফেসবুকে এক বিবৃতিতে বিষয়টি স্পষ্ট করেন।
পিটার হাস বর্তমানে ‘এক্সালারেট এনার্জি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের এপ্রিলের পর তিনি একবারও বাংলাদেশে আসেননি।
এনসিপি নেতা নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী সংবাদমাধ্যম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, “পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটি সম্পূর্ণ গুজব ও ভিত্তিহীন।”
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এস এম রাগিব সামাদ এএফপিকে বলেন, “যে ভিআইপি যাত্রীদের তালিকা ছড়ানো হয়েছে, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।”
কাগজটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে একাধিক জালিয়াতির প্রমাণ রয়েছে। অফিসিয়াল নাম ‘বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ’-এর পরিবর্তে সেখানে লেখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ’।
এছাড়া তালিকায় ‘শাহরিয়ার চৌধুরী’ নামে এক ব্যক্তিকে বিমানবন্দরের সহকারী পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও কর্মকর্তাদের তালিকায় এ নামে কেউ নেই।
এমিরেটস ইকে-৫৮৩ ফ্লাইটের তথ্যও ভুল। কথিত তালিকায় ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ঢাকা ছাড়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ওইদিন ফ্লাইটটি সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করে। অন্যান্য ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্যেও একাধিক ভুল ধরা পড়ে।
এমনকি যাত্রীদের নামের বানান ও পদবীতেও অসঙ্গতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তালিকায় মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দীন চৌধুরীকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলা হলেও তিনি ২০২২ সালের ২২ মে অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হন।
সব মিলিয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে, পিটার হাসকে ঘিরে প্রচারিত বৈঠক ও ভ্রমণ সংক্রান্ত সব তথ্যই ভুয়া। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা এই তালিকা দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...