বিজ্ঞাপন
এদিন মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারান অন্তত ১৩ জন। একই সময়ে অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন আরও তিনজন। বুধবার (২৭ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি সেনারা গাজার সবচেয়ে বড় শহর গাজা নগরীতে আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। মহল্লা-মহল্লা ধ্বংস করা হচ্ছে, ফলে ফিলিস্তিনিদের জন্য কোথাও আশ্রয় নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
মঙ্গলবার গাজা নগরীর পূর্বাঞ্চলের একটি জনবহুল বাজারে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন। নিহতদের মধ্যে দুইজন নারী ছিলেন বলে জানায় আল-আহলি আরব হাসপাতাল।
আল জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, উত্তর গাজার আস-সাফতাওয়ি এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন। নারী-পুরুষ-শিশুরা ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তায় লম্বা সারি বেঁধে হাঁটছেন। কারও হাতে ব্যাগ, কম্বল, খাটিয়া; কেউ ঠেলাগাড়িতে বোঝাই করে নিচ্ছেন সামান্য জিনিসপত্র। আবার অনেকেই ছোট ছোট শিশুদের হাত ধরে দক্ষিণের তথাকথিত ‘কনসেন্ট্রেশন জোনে’ যাওয়ার পথে রয়েছেন।
প্যালেস্টাইনি সিভিল ডিফেন্সের হিসাবে, গত ৬ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া অভিযানে গাজা নগরীর জায়তুন ও সাবরা এলাকায় অন্তত এক হাজার ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল।
স্থানীয় বাসিন্দা ও লেখক সারা আওয়াদ বলেন, ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে প্রতিদিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে— ঘরে থেকে অবিরাম বোমাবর্ষণের ঝুঁকি নেবেন, নাকি আবারও উদ্বাস্তু হবেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আমি কেন ঘর ছেড়ে তাঁবুতে থাকব? প্রতিদিন দেখি পরিবারগুলো ঘর ছাড়ছে, অথচ তাদের যাওয়ার জায়গা নেই।” আওয়াদের মতে, গাজা নগরীতে এখন ফিলিস্তিনিরা জীবনের শেষ দিনগুলো পার করছে।
হাসপাতাল সূত্র আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেছে, মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৪ জন ফিলিস্তিনি। এর মধ্যে ১৩ জন নিহত হয়েছেন খাদ্য ও ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত জিএইচএফ গত মে মাসের শেষ দিকে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবিক দপ্তর (ওসিএইচএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে— গাজায় ক্ষুধা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে এবং জরুরি সেবাগুলো ভেঙে পড়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে মারা গেছেন আরও তিনজন। এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৩ জনে। নিহতদের মধ্যে ১১৭ জনই শিশু।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...