বিজ্ঞাপন
ইতিহাস বলছে, এক শতকে মাত্র ৩৭ বার ডাকসু নির্বাচন হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরে হয়েছে মাত্র সাতবার। ১৯৯১ সালের পর দীর্ঘ বিরতিতে ২০১৯ সালে সর্বশেষ বিতর্কিত নির্বাচন হলেও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এবার ৯ সেপ্টেম্বরের ভোট সামনে রেখে বড় প্রশ্ন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি আবার দলীয় প্রভাবাধীন ছাত্ররাজনীতির কবলে পড়বে, নাকি শিক্ষার্থীদের জন্য হবে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা?
প্রতিষ্ঠার পর থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত ডাকসু মূলত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, বিতর্ক, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও প্রকাশনা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছে। ষাটের দশকে এসে শিক্ষা আন্দোলন ও সামরিক শাসনবিরোধী সংগ্রামে ডাকসু ও ছাত্রসংগঠনগুলো রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দলীয় প্রভাব ক্রমশ বাড়তে থাকে।
১৯৭০ সালে প্রথমবার সরাসরি ভোটে ভিপি ও জিএস নির্বাচন চালু হয়। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাত্ররাজনীতিকে পরিবর্তিত করে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্তত ৭৫টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে গত দেড় যুগে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দখল, গণরুম, গেস্টরুম, চাঁদাবাজি ও নির্যাতন ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ সজীব ভোরের বাণীকে বলেন, “সবাই যাতে প্রথম বর্ষে এসেই হলে সিট পান, গণরুম-গেস্টরুম আর ফিরে না আসে, ক্যানটিনে সুলভ মূল্যে ভালো খাবার পাওয়া যায়—এমন প্রতিনিধিই আমরা চাই।”
শিক্ষার্থীরা চান, ডাকসু নিয়মিতভাবে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, ক্রীড়া ও সাহিত্যচর্চায় নেতৃত্ব দিক এবং ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ শিক্ষা পরিবেশ বজায় থাকুক।
এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও দখল ও নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা নির্বাচিত হলে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতির মূলোৎপাটন করব।”
স্বতন্ত্র ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা জানান, “ডাকসুকে তার গৌরবময় অতীতের ধারায় ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।”
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, “ডাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থেও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হবে।”
বিশিষ্ট গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ষাটের দশক থেকে ডাকসুতে দলীয় প্রভাব প্রবল হয়। আর স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছাত্রনেতাদের দীর্ঘদিন ছাত্রত্ব বজায় রাখার প্রবণতা বাড়তে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “পঞ্চাশ-ষাটের দশকে ডাকসু শুধু রাজনীতিই নয়, নাটক, সাহিত্য, বিতর্ক, ক্রীড়া—সবক্ষেত্রেই নেতৃত্ব দিয়েছে। এখানেই শিক্ষার্থীরা অনুশীলনের জায়গা পেতেন।”
বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের রাজনীতির জন্য নয়, জাতীয় রাজনীতির জন্যও বড় বার্তা বহন করে। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা সর্বশেষ জুলাই অভ্যুত্থান—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ছিলেন সব আন্দোলনের সামনের সারিতে। তাই এবারের নির্বাচনের ফলাফলও জাতীয় রাজনীতির সমীকরণে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিবছর নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দখলমুক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...