বিজ্ঞাপন
সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছে গাজা সিটির আল-রুয়া টাওয়ার। ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, ভবন খালি করার হুমকি দেওয়ার পরই তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ফলে বাসিন্দা ও সেখানে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। তবে উত্তর গাজাতেই ওই দিন নিহত হয়েছেন ৪৯ জন।
আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়াহ বলেন, “আজ শত শত পরিবার তাদের আশ্রয় হারিয়েছে। ইসরায়েল এসব বিস্ফোরণ ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা জানি, দক্ষিণ কিংবা কোনো মানবিক অঞ্চলে কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, তাদের বাহিনী ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ও সন্ত্রাসী বহুতল ভবন’ ধ্বংস করছে। তবে ফিলিস্তিনি পক্ষ বলছে, বাস্তবে বেসামরিক স্থাপনা ও অবকাঠামোকেই টার্গেট করা হচ্ছে। এর আগেও সৌসি ও মুশতাহা টাওয়ার ধ্বংস করা হয় একই কায়দায়। ধ্বংস হওয়া আল-রুয়া টাওয়ারে ছিল ২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, একটি ক্লিনিক ও জিম।
গত আগস্টে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি সামরিকভাবে দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করে। নেতানিয়াহুর দাবি, এ অভিযানে ইতিমধ্যে অন্তত এক লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তবে গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “উপত্যকার কোথাও নিরাপদ নয়।” তারা দক্ষিণে আল-মাওয়াসি এলাকায় মানবিক নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ইসরায়েলি দাবি ‘প্রতারণামূলক’ বলে উল্লেখ করেছে।
আল-জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, গাজা সিটিতে ‘প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর পর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।’ সাবরা, জাইতুন ও শেখ রাদওয়ান এলাকায় বোমা হামলায় ঘরবাড়ি, সরকারি স্থাপনা, স্কুল ও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করছে বলেও তিনি জানান।
গাজার পশ্চিমে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত আল-ফারাবি স্কুলে ইসরায়েলি বোমা হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্কুলটিতে দুটি রকেট আঘাত হানে এবং এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মরদেহ ও নিখোঁজদের খোঁজ চলছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৪ হাজার ৩৬৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৬ জন। হাজারো মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকা।
উপত্যকাজুড়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। শুধু গত একদিনেই অনাহারে পাঁচজন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে শিশুও আছে। এ নিয়ে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৭ জনে, এর মধ্যে ১৩৮ শিশু। জাতিসংঘের খাদ্য পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত করার পর থেকে অন্তত ১০৯ জন মারা গেছেন, যাদের ২৩ জন শিশু।
শিক্ষাবিদ, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এ অবস্থায় রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে যুদ্ধ শেষ করার প্রস্তাব দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এটিকে হামাসের জন্য ‘চূড়ান্ত সতর্কতা’ বলেও উল্লেখ করেন। হামাস জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি ‘ধারণা’ পেয়েছে এবং যেকোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছে।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...