Logo Logo

জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে তাকাইচি


Splash Image

জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন এমন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্বের জন্য কট্টর রক্ষণশীল নেতা সানায়ে তাকাইচি শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন। রাজনৈতিকভাবে নারী নেতৃত্বে এখনও পিছিয়ে থাকা এই দেশে এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


আগামী ৪ অক্টোবর এলডিপির ভোট অনুষ্ঠিত হবে। জনমত জরিপে দীর্ঘদিন ধরেই তাকাইচি এগিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে কৃষিমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমির সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র। গত বছর তাকাইচি অল্পের জন্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার কাছে রানঅফ পর্বে হেরে গিয়েছিলেন, তবে এবার তার নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদি তাকাইচি দলীয় ভোটের পাশাপাশি সংসদীয় ভোটেও জয় পান, তাহলে তিনি জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হবেন।

নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও লিঙ্গবিষয়ক গবেষক হিরোকো তাকেদা বলেন, “একজন নারী যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে তা জাপানকে বিশ্ববাসীর চোখে এক নতুন আলোকে তুলে ধরতে পারে।”

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ সূচকে ১৪৮টি দেশের মধ্যে জাপান ১১৮তম স্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে জাপান সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে। দেশে কখনো কোনো নারী প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হননি। ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাপানের নিম্নকক্ষ পার্লামেন্টে নারীর সংখ্যা মাত্র ১৫.৭%, যেখানে বৈশ্বিক গড় ২৭.১% এবং এশীয় গড় ২২.১%।

নারা প্রিফেকচারের বাসিন্দা তাকাইচি তার প্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। একসময় নারী ইস্যুতে সক্রিয় না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তার অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন, বেবিসিটারের খরচ আংশিক করছাড়ের আওতায় আনা হবে এবং যেসব কোম্পানি ইন-হাউস চাইল্ড কেয়ার দেবে, তাদের কর ছাড় দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “আমি নিজে জীবনে তিনবার নার্সিং ও কেয়ারগিভিংয়ের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। তাই আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে, কাউকে যেন আর কর্মজীবন ত্যাগ করতে না হয় শিশু পালন, কেয়ারগিভিং বা সন্তান স্কুলে না যাওয়ার কারণে।”

এছাড়াও তাকাইচি মেনোপজ সংক্রান্ত নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সহানুভূতিশীল অবস্থান এখন তরুণ সংস্কারপন্থী কোইজুমির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গত বছর কোইজুমি সংসদে এমন একটি প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন যেখানে দম্পতিরা চাইলে আলাদা পদবি রাখতে পারবে, যা লিঙ্গ সমতার একটি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। তবে তাকাইচি এই আইন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলেন।

অনেকে বলছেন, যদি তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী হন, এটি হতে পারে ‘গ্লাস ক্লিফ’ পরিস্থিতির একটি উদাহরণ, যেখানে নারীদের নেতৃত্বে বসানো হয় সংকটকালীন সময়ে, যখন ব্যর্থতার ঝুঁকি বেশি থাকে। এলডিপি দুই কক্ষের সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে বাজেট ও অর্থনৈতিক প্যাকেজ পাস করাতে বিভক্ত সংসদ পরিচালনা করতে হবে এবং বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রশাসনের আয়ু সংক্ষিপ্ত হতে পারে এবং অনাস্থা ভোটের আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতি অন্যান্য উন্নত গণতন্ত্রেও দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সংকটে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন থেরেসা মে, ২০২২ সালে অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই দায়িত্ব নেন লিজ ট্রাস, এবং ২০২৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার লিবারেল পার্টির ইতিহাসে প্রথম নারী নেতা হন সুসান লেই।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...