Logo Logo

মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না আসিয়ান


Splash Image

আসন্ন ডিসেম্বরে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। জোটের কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে সোমবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার প্রচেষ্টার জন্য আসিয়ানের এই সিদ্ধান্তকে একটি বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লেইং আগামী ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধের পর জাতীয় পুনর্মিলনের এক ধাপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে শুরু থেকেই নানা বিতর্ক ও সমালোচনা রয়েছে।

সোমবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ১১ জাতির আসিয়ান জোটের শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া নেতারা এক বিবৃতিতে মিয়ানমারে চলমান সংঘাত নিয়ে ‘‘গভীর উদ্বেগ’’ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে দেশটিতে শান্তির পথে ‘‘বাস্তব অগ্রগতির ঘাটতির’’ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা। আসিয়ানের চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই প্রসঙ্গে মিয়ানমারে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

সম্মেলন শেষে দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারে নির্বাচনের আগে সহিংসতা বন্ধ করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংলাপ হওয়া উচিত। এতে জান্তার পক্ষ থেকে আসিয়ান সদস্য দেশগুলোকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণের কথাও বলা হয়েছে।

তবে এই বিষয়ে আঞ্চলিক এক কূটনীতিক এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন যে, এর মানে হলো আসিয়ানের পক্ষ থেকে মিয়ানমারে কোনও পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে না। যদিও অন্যান্য দেশগুলো চাইলে দ্বিপাক্ষিকভাবে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে। অপর এক কূটনীতিকও জানান, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে থেকে আসিয়ান ব্যানারে পর্যবেক্ষক দল পাঠানো নিয়ে কোনও ঐকমত্য হয়নি।

সোলারিস স্ট্রাটেজিস সিঙ্গাপুরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক মুস্তাফা ইজুদ্দিনের মতে, আসিয়ানের এই সিদ্ধান্ত ‘‘নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের বৈধতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বড় আঘাত হানবে।’’ তিনি মনে করেন, এর ফলে সেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে না।

এদিকে, মিয়ানমারে বিশাল ভুখণ্ডে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে না বলে জানিয়েছে জান্তা সরকার। কারণ ওই সব এলাকা এখনও দেশটির গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা এবং জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সোমবার আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান মিয়ানমারে একের পর এক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। গ্রামগুলো বোমায় বিধ্বস্ত বা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে চলমান সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘জনগণকে রক্ষা করার কথা যাদের, সেই সেনাবাহিনীই এখন জনগণের ওপর হামলা চালাচ্ছে। দেশটিতে বর্তমানে সংঘাতের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজনের প্রচেষ্টা চলছে।’’

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মিয়ানমারের নির্বাচনকে ‘‘প্রহসন’’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে যে, জান্তা ‘‘দমনমূলক কৌশল’’ নিচ্ছে এবং ‘‘ভোটের সমালোচক যেকোনও ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করছে।’’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার কাইসা অলংগ্রেনও পর্যবেক্ষক পাঠানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি এএফপিকে বলেন, মিয়ানমারের পরিকল্পিত এই নির্বাচন ‘‘না অবাধ, না সুষ্ঠু।’’ তিনি স্পষ্ট করে জানান, এই মানদণ্ডের ভিত্তিতে তারা এমন কোনও প্রক্রিয়ায় পর্যবেক্ষক পাঠাবেন না, যাকে তারা নির্বাচন হিসেবে স্বীকৃতি দেন না।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার এখনও আসিয়ানের সদস্য হলেও, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা নেতাদের আসিয়ান সভায় অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম আসিয়ানের অন্যান্য সদস্য দেশ। সর্বশেষ সদস্য হিসেবে রোববার যোগ দিয়েছে পূর্ব তিমুর। এর আগে, জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি টম অ্যান্ড্রুজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, জান্তার প্রহসনকে বৈধতা দিতে মিয়ানমারে পর্যবেক্ষক পাঠানো উচিত হবে না আসিয়ানের।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...