বিজ্ঞাপন
সরকারি কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার ভোরের দিকে ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে এই টাইফুন আঘাত হানতে শুরু করে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালমেগির তাণ্ডবে সেবু দ্বীপের সব শহর প্লাবিত হয়েছে। কর্দমাক্ত বন্যার পানিতে ভেসে যাচ্ছে গাড়ি, ট্রাক এবং বিশাল আকারের কনটেইনার।
সেবুর বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেজান্দ্রো জানান, সেবুতেই এ পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। তবে টাইফুনের প্রভাবে দেশব্যাপী নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। বেশিরভাগ মানুষ পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ চারম্যান ভারিলা জানিয়েছেন, কালমেগির আঘাতের আগের ২৪ ঘণ্টায় সেবু সিটির আশপাশের এলাকায় ১৮৩ মিলিমিটার (সাত ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা মাসিক গড়ের ১৩১ মিলিমিটারের চেয়ে অনেক বেশি।
সেবুর প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো ফেসবুকে লিখেছেন, “সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই নজিরবিহীন। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু প্রকৃত ঝুঁকির কারণ হলো পানি। বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
স্থানীয় দুর্যোগ কর্মকর্তা এথেল মিনোজা জানান, সেবু সিটিতে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লেইতে প্রদেশে নিজ বাড়িতে পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধ এবং বোহলে গাছ চাপা পড়ে আরও একজন নিহত হয়েছে।
সেবু সিটির ২৮ বছর বয়সী বাসিন্দা ডন ডেল রোসারিও বলেন, “ঝড়ের সময় আমরা একটি ভবনের ওপরের তলায় আশ্রয় নিই। পানি খুব দ্রুত উঠছিল। ভোর ৪টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়; মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না। আমি এখানে ২৮ বছর ধরে আছি, এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু দেখিনি।”
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে ঘূর্ণিঝড় ও টাইফুন ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। উষ্ণ মহাসাগর এবং আর্দ্র বায়ুমণ্ডল এই ঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতকে আরও তীব্র করছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা আলেজান্দ্রো জানিয়েছেন, ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আগাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত যারা তাঁবুতে বসবাস করছিলেন, তাদেরও নিরাপত্তার স্বার্থে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে, ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়ে উত্তর মিন্দানাও দ্বীপে একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কেউ জীবিত আছেন কি না তা এখনও জানা যায়নি।
টাইফুন কালমেগি বর্তমানে ফিলিপাইনের পশ্চিমাঞ্চলের ভিসায়ান দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করছে। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছে এবং দমকা হাওয়ার গতি ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে। এতে অনেক এলাকায় গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে।
ফিলিপাইনে প্রতিবছর গড়ে অন্তত ২০টি ঝড় ও টাইফুন আঘাত হানে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ভারিলা জানিয়েছেন, কালমেগির আঘাতের মাধ্যমে দেশটি ইতোমধ্যে বার্ষিক গড় সংখ্যায় পৌঁছে গেছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে আরও তিন থেকে পাঁচটি ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরেও ফিলিপাইন দুটি শক্তিশালী ঝড়ে আক্রান্ত হয়েছিল, যার মধ্যে একটি ছিল সুপার টাইফুন রাগাসা, যা প্রতিবেশী তাইওয়ানেও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। ওই সময় তাইওয়ানে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...