Logo Logo

ট্রাম্পের হুমকি উড়িয়ে নিউইয়র্কের মেয়র হলেন জোহরান মামদানি


Splash Image

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জয় পেয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি। এনবিসি নিউজের পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রগতিশীল ভোটারদের উজ্জীবিত করে এবং দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে তিনি এই ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছেন। তার জয়ে যেমন আনন্দে ভাসছে প্রগতিশীল শিবির, তেমনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রিপাবলিকান নেতারা ও কিছু ডেমোক্র্যাটিক মধ্যপন্থী রাজনীতিক।


বিজ্ঞাপন


নিউইয়র্কের ১১১তম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মামদানি। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী মামদানি সহজ ব্যবধানে পরাজিত করেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে। কুয়োমো ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েন। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস গত সেপ্টেম্বরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে কুয়োমোকে সমর্থন জানান।

প্রায় এক বছর আগে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করা জোহরান মামদানির জন্য এটি এক অবিস্মরণীয় উত্থান। একজন তুলনামূলক অখ্যাত স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে তিনি আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে পৌঁছে গেছেন। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে তিনি নিউইয়র্কের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরিকে দুই দফায় পরাজিত করেন।

এখন জাতীয়ভাবে আলোচিত এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে মামদানিকে সামলাতে হবে বিশাল প্রশাসনিক কাঠামো। তাকে বাস্তবায়ন করতে হবে তার উচ্চাভিলাষী নীতিমালা এবং প্রগতিশীল রাজনীতির জাতীয় ধারায় প্রভাব বিস্তার করতে হবে। তার ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—ভাড়া নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ভাড়া বৃদ্ধিতে স্থগিতাদেশ, সার্বজনীন শিশুসেবা, বিনামূল্যে বাস চলাচল ব্যবস্থা ও সিটি করপোরেশন পরিচালিত মুদি দোকান চালু করা।

কুইন্সে হাজারো সমর্থকের সামনে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এক সমাবেশে মামদানি বলেন, “এমন মুহূর্ত যেন আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল—এমনটা ভাবতে ইচ্ছে করে। কিন্তু যখন আমি প্রচারণা শুরু করি, তখন সেখানে একটিও টেলিভিশন ক্যামেরা ছিল না। চার মাস পর, ফেব্রুয়ারিতেও আমাদের সমর্থনের হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ—আমরা ছিলাম সেই প্রার্থীর সঙ্গে সমান, যার নাম ছিল ‘অন্য কেউ’।”

বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির এই জয়ের প্রভাব শুধু নিউইয়র্কেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি সারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আলোচনার জন্ম দেবে। নিউইয়র্কে তার প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অ্যালবানি ও সিটি কাউন্সিলের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করা—যাদের অনেকেই শুরুতে তার পাশে দাঁড়াতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।

ডেমোক্র্যাট নেতারা এখন খতিয়ে দেখছেন, কীভাবে মামদানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের বার্তা ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছেছেন এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটকে নির্বাচনের প্রধান ইস্যুতে পরিণত করেছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা ইতিমধ্যেই মামদানির বামঘেঁষা নীতিকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।

এনবিসি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী, মামদানি নিউইয়র্কের প্রায় সব জাতিগত গোষ্ঠীর ভোট পেয়েছেন—শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, এশীয় ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর বড় অংশই তাকে বেছে নিয়েছেন। ৪৫ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ছিল বিপুল; কুয়োমোর চেয়ে ৪৩ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন তিনি। তবে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে ভোটারদের মধ্যে কুয়োমো এগিয়ে ছিলেন ১০ পয়েন্টে।

শিক্ষাগত পার্থক্যও ভোটের ফলাফলে বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া নতুন অভিবাসী ভোটার ও জন্মসূত্রে নিউইয়র্কের ভোটারদের মধ্যেও স্পষ্ট বিভাজন লক্ষ্য করা গেছে।

নির্বাচনজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মামদানির ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান। তার মুসলিম পরিচয় ও ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চললেও ভোটাররা শেষ পর্যন্ত তাকেই বেছে নেন। এক্সিট পোল অনুযায়ী, ইহুদি ভোটারদের মধ্যে কুয়োমো ৬০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যেখানে মামদানি পান ৩১ শতাংশ ভোট।

নির্বাচনের শেষ সপ্তাহগুলোতে মামদানি ও কুয়োমোর মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ হয়। কুয়োমো তাকে “নিউইয়র্কে বিভাজন সৃষ্টিকারী” আখ্যা দেন, আর মামদানি কুয়োমোকে ট্রাম্পের “কাঠপুতলি” বলে সমালোচনা করেন। নির্বাচনের আগের রাতেই ট্রাম্প কুয়োমোকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “স্লিওয়াকে ভোট দেওয়া মানে মামদানিকে ভোট দেওয়া।”

একইসঙ্গে রিপাবলিকান ভোটারদের বড় অংশও কুয়োমোর পক্ষে অবস্থান নেয়—এক্সিট পোল অনুযায়ী, রিপাবলিকানদের ৬১% ভোট কুয়োমো পান, আর স্লিওয়া ৩৫% ভোটে সীমাবদ্ধ থাকেন।

গত মাসের শেষদিকে এক আবেগপূর্ণ ভাষণে মামদানি বলেন, তিনি নিজের মুসলিম পরিচয় নিয়ে “বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন” আক্রমণের মুখে পড়েছেন।

“তারা এই নির্বাচনকে বানাতে চেয়েছে আমার ধর্মবিশ্বাসের ওপর গণভোট, কিন্তু আমি লড়েছি নিউইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের বিরুদ্ধে।”

নিউইয়র্কের ইতিহাসে তিনিই হচ্ছেন প্রথম মুসলিম মেয়র। তার এই বিজয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...