Logo Logo

বাংলাদেশের সীমান্তে কেন সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে ভারত


Splash Image

ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার উপকণ্ঠে সীমান্তের কাছে ভারতীয় সৈন্যরা টহল দিচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামের গুয়াহাটিতে দেশটির বিমান বাহিনীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ বিমান প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাফায়েল, সুখোই, মিরাজ ও পরিবহন বিমানগুলো ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর দিয়ে প্রদর্শনীভঙ্গিতে উড়ে বেড়ায়। ভারতের দাবি, এটি তাদের বিমান বাহিনীর বার্ষিকী উদযাপনের অংশ।


বিজ্ঞাপন


তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে বিমান প্রদর্শনীর দৃশ্যগুলো ভারতের পূর্ব সীমান্তে নীরব সামরিক শক্তি প্রদর্শনের ইঙ্গিত বহন করছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে তিনটি নতুন সম্পূর্ণরূপে কার্যকর ‘সেনা গ্যারিসন’ স্থাপন করেছে ভারত। এগুলো হলো — বামুনি (আসামের ধুবড়ি জেলা), কিষেনগঞ্জ (বিহার) এবং চোপড়া (উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গ)। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ সূত্র এই পদক্ষেপকে ‘অস্পষ্টতা থেকে প্রস্তুতির দিকে একটি পরিবর্তন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ঐতিহাসিকভাবে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে নয়াদিল্লি এবং ঢাকা আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। তবে গত বছর বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত আন্দোলনের পর উত্তেজনা তীব্র হতে শুরু করে। এই আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। নয়াদিল্লি সরকার ধারাবাহিকভাবে এই আন্দোলনকে একটি ‘চরমপন্থী আন্দোলন’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে।

ভারতের সাপ্তাহিক সংবাদ ম্যাগাজিন দ্য উইকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন গ্যারিসনগুলো মূলত শিলিগুড়ি করিডোরকে রক্ষা করার জন্য অবস্থান করছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সবচেয়ে সংবেদনশীল কৌশলগত দুর্বলতাগুলোর মধ্যে একটি। ম্যাগাজিনে একজন জ্যেষ্ঠ ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার উদ্ধৃতি রয়েছে, “উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য দুর্বলতা দূর করা এবং একাধিক দ্রুত প্রতিক্রিয়ার বিকল্প তৈরি করা এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য।”

গত সপ্তাহে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আরসি তিওয়ারি চোপড়ার নতুন ঘাঁটি পরিদর্শন করেন। তিনি সৈন্যদের প্রশংসা জানিয়ে ‘অল্প সময়সীমার মধ্যে’ ঘাঁটি স্থাপনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান। চোপড়ার ঘাঁটিটি বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা লালমনিরহাট বিমানঘাঁটির বিপরীতে।

ইতোমধ্যে বামুনিগাঁও ঘাঁটির ফলে ধুবড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে ভারতের সামরিক কার্যক্ষমতা প্রসারিত হয়েছে। historically, এই এলাকা নজরদারির ‘অন্ধ স্থান’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়, যেখানে এটি যমুনা নামে পরিচিত।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই সামরিক পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানের নৌবাহিনী প্রধানের চার দিনের বিরল ঢাকা সফরের সময় ঘটেছে। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন নেতা নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস হাসিনার সরকার পতনের পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীন এবং পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছেন, যা ভারতের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী।

বেইজিং সফরের সময় ড. ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ‘স্থলবেষ্টিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বাংলাদেশকে এই অঞ্চলের ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই মন্তব্য ভারতীয় কৌশলগত মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।

ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বেইজিং এবং ইসলামাবাদের প্রতি ঢাকার পদক্ষেপগুলো নয়াদিল্লির অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এখন নতুন সামরিক স্থাপনাগুলোকে কেবল প্রতিরক্ষামূলক নয়, বরং ‘পূর্ব-প্রতিরোধমূলক অবস্থান’ হিসেবে দেখছেন, যা অনুভূত ঘেরাও রোধের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...