বিজ্ঞাপন
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মঙ্গলবার এসব হামলার ঘটনা ঘটে। গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার হওয়া ৩৫ অজ্ঞাত ফিলিস্তিনির মরদেহ আল-শিফা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে। সরকারি হিসাবে অন্তত ৬৯ হাজার ১৮২ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৯৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ২৪৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজারো নিখোঁজ মানুষের মরদেহ চাপা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজযুম জানান, “গাজার পরিবারগুলো এখনো স্বজনদের খুঁজে ফিরছে। তারা নাসের হাসপাতাল, মরচুয়ারি ও শনাক্তকরণ কক্ষে ছুটে বেড়াচ্ছে—ভাঙা শরীরের অংশ, পোশাক বা কোনো দাগ দেখে প্রিয়জনকে চিনে ফেলার চেষ্টা করছে।”
তিনি আরও বলেন, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন। অনেক মরদেহ পচে গেছে, আর ডিএনএ পরীক্ষার সরঞ্জামও নেই। এতে অসংখ্য পরিবার অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে—বিশেষ করে মায়েরা, যাঁরা প্রতিদিন হাসপাতালে স্বজনের খোঁজে যান, কিন্তু শেষে হতাশা নিয়ে ফিরে আসেন।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, ১০ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েল অন্তত ২৮২ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও সরাসরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে এসব হামলা চালানো হয়। আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ৩১ দিনের মধ্যে ২৫ দিনই ইসরায়েল গাজায় আক্রমণ চালিয়েছে—অর্থাৎ মাত্র ছয় দিন কোনো সহিংসতা ঘটেনি।
তবু যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, যুদ্ধবিরতি এখনো ‘চলমান’। অন্যদিকে মঙ্গলবার দখলকৃত পশ্চিম তীরে ডজনখানেক মুখোশধারী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী দুটি ফিলিস্তিনি গ্রামে হামলা চালায়। তারা গাড়ি ও সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, এতে অন্তত চারজন ফিলিস্তিনি আহত হন।
বেইত লিদ ও দেইর শারাফ গ্রামে এই হামলাগুলো চালানো হয়। বসতি স্থাপনকারীরা চারটি দুগ্ধবাহী ট্রাক, কৃষিজমি, টিনের ঘর ও এক বেদুইন সম্প্রদায়ের তাঁবুতে আগুন লাগায়। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা মুয়াইয়াদ শা’বান অভিযোগ করেন, এসব হামলা ফিলিস্তিনিদের জমি দখলের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ, এবং ইসরায়েল সরকার বসতি স্থাপনকারীদের রক্ষা করছে।
ইসরায়েলি পুলিশ জানিয়েছে, ‘চরমপন্থী সহিংসতার’ অভিযোগে চারজন ইসরায়েলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আল জাজিরার ফ্যাক্টচেক ইউনিট সানাদ যাচাই করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি গাড়ি জ্বলছে এবং ফিলিস্তিনিরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। একই দিন ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপরও বসতি স্থাপনকারীরা হামলা চালায়, এতে একটি সামরিক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জনপ্রিয়
বিজ্ঞাপন
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...