Logo Logo

দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার সাংবাদিককে ফের পা ভেঙে দেয়ার হুমকি দিলেন বিএনপি নেতা


Splash Image

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দৈনিক জনকণ্ঠ ও দেশকাল নিউজের জেলা প্রতিনিধি নাছরুল্লাহ আল-কাফী এবং নাগরিক প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি আরিফ বিল্লাহর ওপর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী হামলার সাতদিন পার হলেও এখনও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনার পর উল্টো সাংবাদিকদের হুমকি ও ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বালিপাড়া ইউনিয়নের স্থানীয় যুবদল নেতা খসরুল আলম আহত সাংবাদিক নাছরুল্লাহ আল কাফীর মোবাইল ফোনে কল করে আসামীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে জানতে চান। এ সময় পাশে থাকা উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও বালিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ওরফে কালাম সিকদার ওই সাংবাদিকের পায়ের নলি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়। পরে কালাম সিকদারের পক্ষে একটি নম্বর থেকে কল করে সংবাদ না করার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা কালাম সিকদার বলেন, “আমি ওকে কল দেইনি, হুমকি দেব কিভাবে।”

এদিকে শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে ইন্দুরকানী এফ করিম আলিম মাদ্রাসা মাঠে জানাজা নামাজ শেষে অভিযুক্ত কালাম সিকদারের সঙ্গে দেখা হলে পিরোজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নাসির উদ্দীন বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেন। এ সময় প্রকাশ্যেই আবারও ওই সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নাসির উদ্দীন জানান, কালাম সিকদার বলেন, “ওকে হুমকি না দিয়ে ওর পা ভেঙে দেওয়া দরকার ছিল। ওকে পেলে পা ভেঙে দিব।”

ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আহসান কবির বলেন, “আসামিদের গ্রেফতারের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। হুমকির বিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঘটনার প্রতিবাদে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে পিরোজপুর শহরের টাউন ক্লাব সড়কে জেলার কর্মরত সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেন। পাশাপাশি পিরোজপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন, ইন্দুরকানী প্রেসক্লাব, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ জেলা শাখা ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটি পৃথক বিবৃতির মাধ্যমে তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই দাবি জানান সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

উল্লেখ্য, গত রোববার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে ইন্দুরকানী উপজেলার চন্ডিপুর বাজারে সুপারি কেনাবেচা ও পরিবহন বিষয়ে খবর সংগ্রহ করছিলেন ওই দুই সাংবাদিক। একই সময়ে সেখানে চন্ডিপুর ইউনিয়ন বিএনপির একটি সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে উপস্থিতি কম থাকায় কিছু নেতাকর্মী সাংবাদিকরা ফাঁকা চেয়ারের ছবি তুলছে এমন সন্দেহে তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় দুই সাংবাদিক গুরুতর আহত হন এবং তাদের দুটি মোবাইল ফোন, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা স্ট্যান্ড, পেনড্রাইভ, প্রেসকার্ড, মানিব্যাগ ও নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে আহত আরিফ বিল্লাহর ভাই শরিফ বিল্লাহ বাদী হয়ে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল নেতাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামীরা হলেন: চন্ডিপুর (খোলপটুয়া) গ্রামের হাবিবুর রহমান শেখের ছেলে যুবদল নেতা অহিদুল ইসলাম শেখ (৩৫), দক্ষিণ চন্ডিপুর গ্রামের হারুন মৃধার ছেলে ছাত্রদল নেতা ফাইজুল ইসলাম তাওহিদ মৃধা (২১), পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের আব্দুল আউয়াল বেপারীর ছেলে তানভীর আহমেদ রাকিব (২২), উত্তর কলারন গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে মো. জুয়েল হাওলাদার (৪০), পশ্চিম কলারন গ্রামের আলি আকবার তালুকদারের ছেলে বিএনপি কর্মী শাহাদাৎ হোসেন হিরু তালুকদার (৪৮), পশ্চিম চরবলেশ্বর গ্রামের মেনহাজের ছেলে যুবদল নেতা ফারুক হোসেন (২৮), পচ্চিম চরবলেশ্বর গ্রামের মৃত আলী আহমেদের ছেলে জমি দখল ও লুটপাটসহ একাধিক মামলার সাবেক আসামী বিএনপি নেতা আবু ছালেহ বেপারি (৫০) এবং আল আমিন শেখ (৪২)সহ আরও অজ্ঞাত ২০/২৫ জন।

বর্তমানে আহত দুই সাংবাদিক পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...