Logo Logo

গাজায় গত ৪৪ দিনে ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল


Splash Image

গাজায় গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে মাত্র ৪৪ দিনে ইসরায়েল অন্তত ৪৯৭ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছে শত শত ফিলিস্তিনি।


বিজ্ঞাপন


রোববার (২৩ নভেম্বর) আল জাজিরার বরাতে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, এসব ঘটনায় প্রায় ৩৪২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু, নারী ও বয়স্ক।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষের যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্রমাগত গুরুতর ও পদ্ধতিগত লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা জানাই। এই লঙ্ঘনগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং সংশ্লিষ্ট মানবিক প্রোটোকলের স্পষ্ট লঙ্ঘন।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শুধু শনিবারই সংঘটিত হয়েছে ২৭টি লঙ্ঘনের ঘটনা। এতে ওইদিন ২৪ জন শহীদ এবং ৮৭ জন আহত হয়েছেন। মানবিক ও নিরাপত্তাগত পরিণতির জন্য ইসরায়েলকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করা হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী বিধ্বস্ত গাজায় জরুরি মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সামগ্রীর অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত থাকার কথা থাকলেও ইসরায়েল তা কঠোরভাবে সীমিত করে রেখেছে। শনিবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ অন্তত ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যা চলমান যুদ্ধবিরতির আরেকটি বড় লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় দাবি করেছে, গাজার তথাকথিত ‘হলুদ রেখার’ ভেতরে হামাসের এক যোদ্ধা ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলা চালানোর পর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এতে পাঁচজন সিনিয়র হামাস যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

তবে হামাস ইসরায়েলের এই দাবির প্রমাণ চেয়ে অভিযুক্ত যোদ্ধার পরিচয় প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য ইজ্জত আল-রিশেক মধ্যস্থতাকারী দেশসমূহ ও মার্কিন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ইসরায়েলকে গাজা চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করে।

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল চুক্তি এড়িয়ে যাওয়ার ও ধ্বংসের যুদ্ধে ফিরে যাওয়ার অজুহাত তৈরি করছে। ইসরায়েলই প্রতিদিন এবং পদ্ধতিগতভাবে চুক্তি লঙ্ঘন করছে।’ হামাস যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করেছে—এমন সব অভিযোগ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

গাজা সিটি থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আযম বলেন, বাস্তবে এই যুদ্ধবিরতি কেবল নামমাত্র। ঘোষিত বিরতি সত্ত্বেও গাজাজুড়ে ধারাবাহিক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি বলেন, এসব হামলার কারণে গাজার সাধারণ মানুষ কেবল ‘নিরাপত্তার এক ভগ্নাংশ অনুভূতি’ পাচ্ছে, যা প্রকৃত নিরাপত্তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

তারেক আবু আযম আরও জানান, এই ধারাবাহিক হামলা গাজা চুক্তিকে একটি বাধ্যতামূলক শান্তিচুক্তির পরিবর্তে কৌশলগত সামরিক প্রত্যাহার হিসেবে বিবেচনার প্রবণতা আরও জোরদার করছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার গভীরে পুনরায় অবস্থান গ্রহণ করায় উত্তর গাজায় কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

চুক্তিতে উল্লেখিত ‘হলুদ রেখা’ একটি অচিহ্নিত সীমানা, যেখানে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সময় ইসরায়েলি বাহিনী নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে ওই সীমারেখার দিকে এগিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়মিত গুলি চালানো হচ্ছে এবং হত্যা করা হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি এখনও ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল এই ‘হলুদ রেখা’ অতিক্রম করে পশ্চিম দিকে আরও এগিয়ে গেছে এবং চুক্তিতে নির্ধারিত সীমানা একতরফাভাবে পরিবর্তন করেছে। এ পরিস্থিতিতে হামাস যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর অবিলম্বে হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...