Logo Logo

সৌরভে মুগ্ধ ফরিদপুরবাসী


Splash Image

ফরিদপুরে স্বেচ্ছাসেবার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হলো ২৫ বছর বয়সী আহমেদ সৌরভ। ছাত্রজীবন থেকেই মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন তিনি। বর্তমানে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তার জীবনের একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ। ২০১৫ সাল থেকে তিনি মানুষের সেবা করছেন নিজের মতো করে, আর সেই চেষ্টার মধ্য দিয়ে ফরিদপুরের নাগরিক মননে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।


বিজ্ঞাপন


সৌরভের নেতৃত্বে সংগঠন ‘আমরা করবো জয়’ শুধুমাত্র সামাজিক উদ্যোগই নয়, বরং স্বেচ্ছাসেবার সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার একটি শক্তিশালী নাম। সামাজিক কাজের পাশাপাশি তিনি ফেসবুকে চিকিৎসা-সংক্রান্ত ভিডিও তৈরি করেন, যেখানে প্রায় এক লাখ ৫৩ হাজার ফলোয়ার তার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত।

ছাত্রজীবনের সময় থেকেই আশপাশের মানুষের কষ্ট দেখে মন কাঁদত কিশোর সৌরভের। সেই আর্তমানবতার সেবার শুরু আজ তাকে ফরিদপুরে মানুষের প্রিয় হয়ে তুলেছে। তিনি ও তার সংগঠনের বন্ধুরা ইতিমধ্যেই শহর ও আশপাশের ৩৫টি গৃহহীন পরিবারকে থাকার ঘর নির্মাণ করেছেন।

সৌরভ ও তাঁর সহযোগীরা ছয়জন মাঝিকে কাঠের নৌকা তৈরি করে দিয়েছেন, ছয়জনকে রিকশা এবং পাঁচজনকে ভ্যান প্রদান করেছেন। এভাবে তারা স্বাবলম্বী হয়েছেন। ৫৩ জনকে কর্মসংস্থান দিয়েছেন, দরিদ্র পরিবারের দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন সহায়তা করে, এবং প্রায় চার হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছেন হাসপাতালে থাকা রোগীদের জন্য। সৌরভ নিজেও ২০ বার রক্ত দিয়েছেন। জন্মগত হার্টের সমস্যাযুক্ত ছয়টি শিশু চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণ আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।

রাতের অন্ধকারে পথচারী ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা, বার্ষিক ‘ফুচকা উৎসব’ আয়োজন এবং সেখানে পাওয়া অর্থ দিয়ে একজনকে স্বাবলম্বী করে তোলা—এসবই ‘আমরা করবো জয়’-এর নিয়মিত কার্যক্রম। করোনা মহামারির সময় খাদ্য, অক্সিজেন সিলিন্ডার, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা এবং শীতার্তদের লেপ-গরম কাপড় বিতরণের মতো কাজ করেছেন তিনি, যার প্রকৃত পরিসংখ্যান সৌরভও মনে রাখতে পারেন না।

সৌরভ বলেন, “আমি এসব করি ভালো লাগা ও আত্মতৃপ্তির জন্য। সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে করি। হিসাব রাখার কথা তখন মনে থাকে না।”

শহরতলির ডিক্রীরচরে এতিম বাচ্চাদের পড়াশোনা ও থাকার জন্য ২০২৩ সালে ‘আবদুস সালাম এতিমখানা’ প্রতিষ্ঠা করেছেন সৌরভ। বর্তমানে ১৫ জন এতিম বাচ্চা সেখানে শিক্ষা গ্রহণ করছেন। বাসা ভাড়া দেওয়ার সহজ ব্যবস্থার জন্য হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ করা হয়েছে, যেখানে সবাই সময়মতো সহায়তার অর্থ পাঠান।

সম্প্রতি শহরের লক্ষ্মীপুর রেলস্টেশন এলাকায় খোঁজ নেওয়া যায় স্বেচ্ছাসেবায় উপকৃত মানুষের। স্টেশনের শেষ প্রান্তে একটি ঝোপঝাড়ের মধ্যে থাকা বাড়ি থেকে বের হন ৫০ বছরের খাদিজা বেগম। সাত বছর আগে সৌরভরা তাকে একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছিলেন। ফিরে এসে তিনি বলেন, “তোরা তো ঘর করে দিছিস, আর কী দিবি। সৌরবিদ্যুতের ব্যাটারিটা চোরে নিয়ে গেছে, পারলে একটা ব্যাটারি লাগিয়ে দিস।”

সংগঠন ‘আমরা করবো জয়’-এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ খান বলেন, “২০১৫ সালে ফেসবুকে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী আহমেদ সৌরভের মানবিক কাজগুলো দেখতাম। ছোট একজন মানুষ, তার অসাধারণ চিন্তা সমাজের অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে। ২০১৬ সালে আমরা সাংগঠনিক কাজ শুরু করি।”

ফরিদপুরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আলতাফ হোসেন বলেন, “সৌরভের কাজ সবসময় মানবিক। চেষ্টা আর সদিচ্ছা থাকলেই আশপাশের মানুষকে ভালো থাকার খোরাক জোগানো যায়। সমাজে এমন ছেলেমেয়ের খুবই প্রয়োজন।”

সৌরভের পরিবারেও মানবিকতার ছাপ। বাবা আবদুস সালাম সরকারি চাকরিজীবী, মা শিউলি আক্তার গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। ফরিদপুর ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করা সৌরভ স্বপ্ন দেখেন একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার, যেখানে অসহায় মানুষরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের চিকিৎসা সেক্টরের উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছে আছে।”

আহমেদ সৌরভের এই সেবা ও দৃষ্টান্ত ফরিদপুরের জন্য অনুপ্রেরণা, যেটি দেখিয়ে দেয়, সদিচ্ছা ও মনোবল থাকলেই সমাজের অন্ধকারে আলো ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...