Logo Logo

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধে ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার উদ্বেগ, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান


Splash Image

সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচজন কংগ্রেস সদস্য। এ বিষয়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি যৌথ চিঠি পাঠিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


চিঠিতে নির্বাচনের আগে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এ ধরনের পদক্ষেপ ভোটারদের একটি বড় অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এই চিঠিতে সই করেন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার গ্রেগরি ডব্লিউ মিকস, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান বিল হুইজেঙ্গা, একই উপকমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার সিডনি কামলাগার-ডোভ, কংগ্রেসম্যান জুলি জনসন ও টম আর সুওজি। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়।

চিঠিতে কোনো রাজনৈতিক দলের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, জাতীয় সংকটের সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করায় প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকার প্রতি তারা সমর্থন জানালেও, একটি বড় রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত রাখা মৌলিক মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত অপরাধ দায়বদ্ধতার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা আশা প্রকাশ করেন, বর্তমান সরকার কিংবা ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আহ্বান এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ২০২৪ সালের গণআন্দোলন দমনের সময় হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। পরে নির্বাচন কমিশন দলটির রাজনৈতিক নিবন্ধনও স্থগিত করে, ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারায় দেশের অন্যতম প্রাচীন এই রাজনৈতিক দল। একই অভিযোগে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা করা হয়। এসব মামলায় দলটির সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। পূর্ববর্তী নির্বাচনের দুই বছর পর আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

চিঠিতে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হন। চিঠিতে বলা হয়, এসব ঘটনার প্রকৃত জবাবদিহি নিশ্চিত করাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন হওয়া উচিত, প্রতিশোধের ধারাবাহিকতা নয়।

২০১৮ ও ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি উল্লেখ করে কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, সংগঠনের স্বাধীনতা এবং সম্মিলিত নয়, বরং ব্যক্তিগত অপরাধ দায়বদ্ধতার নীতি মৌলিক মানবাধিকার। আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধী বা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পুরোপুরি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত এসব নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যালটের মাধ্যমে জনগণের মতামত শান্তিপূর্ণভাবে প্রকাশের সুযোগ দিতে নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি। একই সঙ্গে সততা, স্বচ্ছতা ও নির্দলীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম চালু করতে হবে। রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত রাখা বা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনরায় চালু করা এসব লক্ষ্য অর্জনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও তারা সতর্ক করেন।

চিঠির শেষাংশে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা জোর দিয়ে বলেন, একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারবে। তারা আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে ওয়াশিংটন প্রস্তুত।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন


বিজ্ঞাপন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...