বিজ্ঞাপন
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বাস্তবিক কোনো অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও দুটি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা অনুদান তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠান দুটির তথাকথিত প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মিলে বিগত তিন বছরের তথ্য ছক তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন। এ দুটি মাদ্রাসা হলো—বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের শিলাইকুঠি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ও ভজনপুর ইউনিয়নের নাজির উদ্দিন আঃ স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, শিলাইকুঠি মাদ্রাসার কার্যক্রম বহু আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। মাদ্রাসাটির সাবেক শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, ১৯৮৪/৮৫ সালে এটি স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পেলেও পরবর্তীতে অর্থ সংকট ও শিক্ষক সংকটের কারণে এটি বন্ধ করে শিলাইকুঠি বালাবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সংযুক্ত এবতেদায়ী শাখা হিসেবে চালু করা হয়। দাখিল মাদ্রাসার বর্তমান সুপার ও অন্যান্য শিক্ষকরা একবাক্যে বলেন—শিলাইকুঠি নামে এখন আর কোনো স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা নেই।
অন্যদিকে, নাজির উদ্দিন আঃ স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার অস্তিত্বও এলাকাবাসীর কাছে শুধুই অতীত স্মৃতি। স্থানীয়রা জানান, বহু আগে সেখানে একটি মাদ্রাসা ছিল, কিন্তু জমি সংক্রান্ত মামলার জেরে ভবন ভেঙে যায়, জায়গায় গড়ে উঠেছে একটি চায়ের বাগান। এখন শুধু কিছু ইটের দেয়ালের অবশিষ্টাংশ দেখা গেলেও তা ব্যক্তিমালিকানায় রয়েছে। ওই মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষকও স্বীকার করেছেন যে ১৯৯৪/৯৫ সালের পর প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই দুইটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে এখনো শিক্ষক নিয়োগ দেখানো হচ্ছে। শিলাইকুঠি মাদ্রাসার তথাকথিত প্রধান শিক্ষক আবু তাহের আনসারী স্বীকার করেন যে, প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবে নেই, তবে “ভবিষ্যতে কিছু করা যায় কি না” সেই আশায় কার্যক্রম চালানো হচ্ছে এবং সেখানে তার মেয়ে শিক্ষক হিসেবে আছেন। অপর একজন কথিত শিক্ষক জানান, মাদ্রাসার কোনো ঘর নেই, পাঠদানও হয় না—তবুও অনুদানের তালিকায় তারা রয়েছেন এবং ভবিষ্যতে ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।
এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শওকত আলী দায়সারা বক্তব্য দিয়ে বলেন, ঢাকা থেকে আসা কর্তৃপক্ষ তথ্য নিয়ে গেছে, তিনি কেবল স্বাক্ষর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি নিজে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলাম, তারা ডাকেনি, এখন যদি কোনো সমস্যা হয়, তা মোকাবিলা করবো।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের অনুরোধে মাদ্রাসাগুলোর একটি রিপোর্ট জেলা প্রশাসক বরাবর ফরওয়ার্ড করে পাঠানো হয়েছে।
এই অনুসন্ধানে স্পষ্ট হয়েছে, তেঁতুলিয়ায় সরকারি অনুদান গ্রহণের জন্য মাদ্রাসার কাগজে-কলমে অস্তিত্ব ধরে রেখে, বাস্তবে পাঠদানহীন ও বিলুপ্ত প্রতিষ্ঠানকে জোরপূর্বক জীবিত দেখিয়ে অপব্যবহার চলছে। এটি একটি গুরুতর প্রশাসনিক অনিয়ম এবং সরকারি তহবিল অপচয়ের শামিল।
-মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় প্রতিনিধি
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...