ভয়ঙ্কর প্রতারক শালা ও দুলাভাই।
বিজ্ঞাপন
সৌদির রিয়াদে “এএজিসি” ও “এসিটি” নামের দুটি সাপ্লায়ার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এই মামুন, যিনি কয়েক মাস ধরে শতাধিক শ্রমিকের বেতন আত্মসাৎ করে উধাও বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীরা ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, কেউ তিন মাস, কেউবা পাঁচ মাসের বেতন না পেয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। অনেককে বাসাভাড়া মেটাতে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাঠাতে হয়েছে। কর্মঘণ্টা ১৪ ঘণ্টা ছাড়িয়ে গেলেও তারা ঠিকমতো খাবার ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামের রায়হান হোসেন বলেন, “তিন মাসের বেতন হাতিয়ে নিয়ে মামুন আমাদের ছেড়ে পালিয়েছে। আমাদের এখন খাবার ও দেশে ফেরার টাকাও নেই।”
প্রতারক মামুনের প্রকৃত বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নিজড়া গ্রামে হলেও তার পাসপোর্টে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ। পাসপোর্ট নম্বর: EM0326785। সৌদির “এএজিসি” এবং “এসিটি” নামক দুটি সাপ্লায়ার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে তিনি বিভিন্ন জেলায় প্রবাসী শ্রমিকদের কাজের ব্যবস্থা করে তাদের বেতনের টাকা মূল কোম্পানি থেকে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগীদের দাবি, মামুন এই টাকায় বাংলাদেশে তার আত্মীয়দের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তার বোন জামাই মো. আল-আমিন (সোহেল) ঢাকার ইসলামপুরে কাপড়ের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। মামুনের স্ত্রী রিতু, ভাই সোহাগ এবং শ্বশুর মনির মোল্লা এই প্রতারণায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গোপালগঞ্জ সদরের শফিকুল ইসলাম জানান, “তিন মাসের বেতন প্রায় ৯ হাজার রিয়াল মামুন হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে। এখন তার বোন জামাই আল-আমিন আমাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে ব্যবসা করছে। আমাদের কণ্ঠরোধ করতে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ভুক্তভোগীরাও একই অভিযোগ এনেছেন। রাজবাড়ির রেজাউল মল্লিক বলেন, “তিন মাসের বেতন মেরে দিয়ে মামুন এখন মদিনায় পালিয়ে আছে। আমরা গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
টুঙ্গিপাড়ার হানিফ শেখ বলেন, “আমি পাঁচ মাস কাজ করেও এক টাকাও পাইনি। বাসাভাড়া দেওয়ার জন্য দেশে ফোন করে টাকা আনতে হয়েছে। আমরা চাই আমাদের কষ্টের টাকা ফেরত দেওয়া হোক।”
আরও এক ভুক্তভোগী তুহিন বলেন, “তিন মাস কাজের পর মামুন আমাদের বলে, তোদের আকামা নাই—তাই কোনো টাকা পাবি না। এখন আমরা দেশে ফেরারও টাকা জোগাড় করতে পারছি না।”
সৌদিতে অবস্থানরত প্রবাসীরা ভিডিও বার্তায় দেশীয় গণমাধ্যম ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, মামুন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, আরও বাংলাদেশি প্রবাসী প্রতারণার শিকার হতে পারেন।
এই ঘটনা বাংলাদেশের রেমিটেন্স নির্ভর অর্থনীতির জন্যও একটি অশনিসঙ্কেত। হাজার হাজার প্রবাসী তাদের ঘাম-ঝরা উপার্জন দেশে পাঠিয়ে পরিবার চালায়, অর্থনীতি সচল রাখে। অথচ তাদেরই কষ্টার্জিত টাকায় কেউ কেউ বিদেশে ব্যবসা খুলে বেপরোয়াভাবে প্রতারণা করছে।
ভুক্তভোগী প্রবাসীদের একটাই দাবি—তাদের বেতন ফেরত দিতে হবে এবং প্রতারক মামুন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রতিবেদক - এ.জেড আমিনুজ্জামান রিপন, গোপালগঞ্জ।