ফাইল ছবি।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল থেকেই পরীক্ষার্থীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অনেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই কেন্দ্রে এসে সুশৃঙ্খলভাবে গেটের সামনে লাইনে দাঁড়ান। পরীক্ষার্থীদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম, হাতে প্রবেশপত্র ও প্রয়োজনীয় উপকরণ। অধিকাংশের মুখে মাস্ক ও কারও কারও হাতে স্যানিটাইজার দেখা গেছে। কেন্দ্রের নিরাপত্তায় শিক্ষক, কক্ষ পরিদর্শক ও পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ বছর মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় রয়েছেন প্রায় ১০ লাখ ৫৫ হাজার পরীক্ষার্থী। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে অংশ নিচ্ছেন ৮৬ হাজারের বেশি ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে অংশ নিচ্ছেন ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। আগের বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন।
পরীক্ষা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নকলমুক্ত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। প্রশ্নফাঁস রোধে কেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি ও প্রচারণা বাড়ানো হয়েছে।
পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা ও নিয়মাবলি
শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে:
পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
ওএমআর শিটে সঠিকভাবে তথ্য পূরণ ও বৃত্ত ভরাট বাধ্যতামূলক।
উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না।
শুধু সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে।
মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তত্ত্বীয়, এমসিকিউ ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে।
নিজ প্রতিষ্ঠান নয়, অন্য প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার্থীদের আসন নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রত্যেক পরীক্ষায় উপস্থিতির স্বাক্ষর আবশ্যক।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ৩৩ দফা নির্দেশনায় বলেছে—প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক রাখতে হবে, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, প্রশ্নপত্র নির্ধারিত সেট অনুযায়ী খুলতে হবে এবং অব্যবহৃত সেট ফেরত পাঠাতে হবে। কেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, সচেতনতামূলক মাইকিং, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও নকলবিরোধী পোস্টার লাগানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ভাসানটেক সরকারি কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। পরে তিনি সরকারি বাংলা কলেজ কেন্দ্রও পরিদর্শন করবেন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা পরিচালনার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ভেতরে মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ অফিসগুলোকে আগেভাগেই প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে শুধুমাত্র কাটাযুক্ত এনালগ ঘড়ি ব্যবহার করা যাবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী প্রদত্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেবল পরীক্ষার্থী ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সমন্বয়ক খন্দকার এহসানুল কবির জানান, পরীক্ষার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি থাকবে এবং কেউ পরিবেশ নষ্টের চেষ্টা করলে তাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার লিখিত অংশ চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত।
সকাল ১০টা থেকে ১টা এবং বিকেল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা বোর্ড চাইলে বিশেষ পরিস্থিতিতে সময়সূচি পরিবর্তন করতে পারবে।
প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী:
২৬ জুন: বাংলা প্রথম পত্র
২৯ জুন: বাংলা দ্বিতীয় পত্র
১ জুলাই: ইংরেজি প্রথম পত্র
৩ জুলাই: ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র
৭ জুলাই: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
১০ ও ১৩ জুলাই: পদার্থবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যা
২০ ও ২২ জুলাই: রসায়ন, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস
৩১ জুলাই–১০ আগস্ট: উচ্চতর গণিত, ফিন্যান্স, জীববিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, শিশু বিকাশ, ব্যবসায় সংগঠন
বিকেল শিফটে: উচ্চাঙ্গ সংগীত, পালি, আরবি, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, লঘু সংগীত প্রভৃতি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা যাতে নির্বিঘ্নে শেষ হয়, তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।