ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি : সংগৃহীত
বিজ্ঞাপন
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও খামেনিকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি, শোনা যায়নি কোনো বক্তব্য কিংবা বার্তা। যুদ্ধকালীন সময়ে এমন অনুপস্থিতি দেশজুড়ে উদ্বেগের পারদ বাড়িয়ে তুলেছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক খামেনির কার্যালয়ের আর্কাইভস প্রধান মেহদি ফাযায়েলিকে প্রশ্ন করেন—"মানুষ আমাদের সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। আপনি কি আমাদের বলতে পারবেন তিনি কেমন আছেন?" এই প্রশ্নটি দর্শকদের পক্ষ থেকেও বারবার এসেছে বলে তিনি জানান।
মেহদি ফাযায়েলি সরাসরি কোনো আশ্বস্তি না দিয়ে জানান, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেও উদ্বিগ্ন অসংখ্য প্রশ্ন পাচ্ছেন। তিনি বলেন, "আমাদের উচিত প্রার্থনা করা। যারা সর্বোচ্চ নেতার নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন, তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়, জনগণ তাদের নেতার সঙ্গে বিজয় উদযাপন করতে পারবে।"
নিউ ইয়র্ক টাইমস আরও জানায়, খামেনিকে বর্তমানে সুরক্ষিত একটি বাঙ্কারে রাখা হয়েছে এবং সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় তিনি কোনো ইলেকট্রনিক যোগাযোগে অংশ নিচ্ছেন না। যদিও এই নিরাপত্তা পদক্ষেপ যৌক্তিক, তবে তার দীর্ঘ নীরবতা জনমনে অস্থিরতা তৈরি করেছে।
ইরানের দৈনিক খানেমান-এর প্রধান সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি আমাদের সবাইকে গভীরভাবে চিন্তিত করেছে। এমনকি এমন কথাও উচ্চারিত হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগেও অকল্পনীয় ছিল—যদি খামেনি মারা যান, তবে সেটা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় জানাজা।"
খামেনি শুধু ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নন, বরং সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা হোক কিংবা যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত—সবকিছুর অনুমোদন আসে তার দপ্তর থেকে। তাই তার অনুপস্থিতিতে দেশের সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোর বৈধতা ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ এবং কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হয়েছে। তবে ইরানের সিনিয়র কমান্ডাররা খামেনির সঙ্গে আদৌ কোনো বৈঠক করেছেন কি না—তা নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইরানের ইসলামিক রেভ্যলুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কমান্ডার ইয়াহিয়া সাফাভির পুত্র হামজেহ সাফাভি জানান, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনো খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলার পরিকল্পনা থাকতে পারে। সেই কারণেই খামেনিকে ‘বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন’ রাখা হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিমত।