বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। ফাইল ছবি
বিজ্ঞাপন
ফাতেমা লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়েছে গত পরশু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর সাথে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো।”
উমামা ফাতেমা জানান, এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) গঠনের প্রাক্কালে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’কে কেন্দ্র করে যে উদ্যোগ থেকে তিনি এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন, তা পরবর্তীতে রাজনৈতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের বলি হয়। “দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এই ব্যানারটি স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়ত,”—লিখে তিনি অভিযোগ করেন অনলাইন ও অফলাইনে তার বিরুদ্ধে ‘ভয়াবহ চাপসৃষ্টি’ করা হয়।
তিনি জানান, জুনিয়রদের ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে ‘smear campaign’ চালানো হয়েছে এবং পেইজ এক্সেস না দিয়েই তার বিরুদ্ধে পোস্ট করা হয়েছে। “সো কল্ড সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে, প্রয়োজন শেষ হলে ছুঁড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও লাগে না,”—উল্লেখ করেন তিনি।
উমামা অভিযোগ করেন, মার্চ-এপ্রিল মাসে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন—প্ল্যাটফর্মটি ভেতর থেকে ‘পোকার মতো’ খেয়ে ফেলেছে কিছু সুবিধাবাদী চক্র। জেলা ও উপজেলা কমিটিতে ‘ভয়ানক অনিয়ম’ হয়েছিল বলে জানান তিনি। এসব বিষয়ে সে সময়কার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে তিনি সরাসরি অবজেকশন দিয়েও কোনো জবাব পাননি।
পদ-পদবী নিয়ে হেয়ার রোডে ‘বার্গেইনিং’ করা এবং ‘সুপ্রীম অথোরিটি’র কাছে পদ প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীদের লাইন ধরার সংস্কৃতিরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।
“আমি শেষ দিন পর্যন্ত কাউন্সিলে ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্তে ছিলাম। কিন্তু ভোট শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে আমি ভোটটা দিয়ে আসি”—বলে জানান উমামা ফাতেমা। এরপরও ভোট না দেয়া এক ব্যক্তির হঠাৎ করে কাউন্সিল সদস্য হওয়াকে তিনি ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ ও ‘ভাই-ব্রাদার কোরামের খেলা’ হিসেবে অভিহিত করেন।
সবশেষে তিনি বলেন, “অভ্যুত্থানের কথা চিন্তা করে আমি এই প্ল্যাটফর্ম থেকে সকল ধরনের সমর্থন ও কাউন্সিলে প্রদত্ত ভোট প্রত্যাহার করলাম।”
উমামা ফাতেমা মনে করেন, “এই প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার।” তিনি জানান, তার লক্ষ্য ছিল সংস্কার এবং বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা, কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি। “আমি রুহের ভেতর থেকে বদদোয়া দিচ্ছি এই মোনাফেকদের,”—এই বাক্যে ফুটে ওঠে তার ক্ষোভ ও হতাশা।
এদিকে, বুধবার (২৬ জুন) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন নেতৃত্ব গঠিত হয়েছে। রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশীদ) সভাপতি ও মো. ইনামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। মুখপাত্র হয়েছেন সিনথিয়া জাহীন আয়েশা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপর্যায়ে সারা দেশে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। ৫ আগস্টের ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান’-এ ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের অবসান ঘটে।