বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলায় ঘটেছে এই মর্মান্তিক ঘটনা, যা দেশটির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানের এক সরকারি কর্মকর্তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপিকে জানান, সেনাবাহিনীর গাড়িবহরের মধ্যে একটি বিস্ফোরকবাহী গাড়ি ঢুকে পড়ে এবং ঢোকার পরপরই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। তিনি বলেন, “বিস্ফোরণে ১৩ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য, বাকিরা বেসামরিক নাগরিক।”
বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী দুটি বাড়ির ছাদ ধসে পড়েছে এবং এতে ছয়জন শিশু আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, সেনাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক তালেবান গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) একটি উপশাখা— হাফিজ গুল বাহাদুর আর্মড গ্রুপ। একটি বিবৃতির মাধ্যমে তারা হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, “এই হামলা ছিল আমাদের সাম্প্রতিক প্রতিশোধমূলক অভিযানের অংশ।”
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ ও তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসী হামলার হটস্পট হিসেবে পরিচিত। খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলে তেহরিক-ই তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) সক্রিয় থাকলেও, বেলুচিস্তানে তৎপর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। উভয় গোষ্ঠীর মূল লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের মানচিত্র থেকে নিজ নিজ অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পুনরুত্থানের পর থেকেই পাকিস্তানে সন্ত্রাসী তৎপরতার পুনর্জাগরণ ঘটেছে। ২০২৪ সাল ছিল এই সহিংসতার সবচেয়ে ভয়াবহ বছর। ওই বছরে পাকিস্তানে মোট ৪৪টি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, যা গত এক দশকের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালের সন্ত্রাসবিরোধী চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই বছরে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ৬৮৫ জন সেনাসদস্য এবং ৯২৭ জন বেসামরিক নাগরিক। বিপরীতে, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে নিহত হয় ৯৩৪ জন সন্ত্রাসী।
সাম্প্রতিক এই আত্মঘাতী হামলা দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা নীতিকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে। বিশেষ করে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে তালেবান-সম্পৃক্ত গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে পাকিস্তান সরকারের ভেতরেই।