বিজ্ঞাপন
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতের ঘুমও হারাম হয়ে উঠেছে আতঙ্কে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২১ জুন থেকে টোকারা দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় ভূমিকম্পজনিত তৎপরতা খুবই সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাপানের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থা। সর্বশেষ বুধবার ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে অঞ্চলটিতে।
যদিও এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা সুনামির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ, তবে স্থানীয় প্রশাসন দ্বীপবাসীকে সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনে দ্রুত আশ্রয় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে।
স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল এমবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একজন বাসিন্দা বলেন, “ঘুমাতে গেলেই ভয় লাগে, মনে হয় সবসময় কাঁপছে।” অন্য আরেকজন চিজুকো আরিকাওয়া বলেন, “ভূমিকম্পের আগে রাতে সমুদ্র থেকে এক অদ্ভুত গর্জনের শব্দ আসে। পুরোটা একেবারে ভৌতিক।”
আকুসেকিজিমা দ্বীপের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী ইসামু সাকামোতো বলেন, “নিচ থেকে হঠাৎ একটা ধাক্কা লাগে, তারপর পুরো ঘর কেঁপে ওঠে। তখনই গা গুলিয়ে ওঠে, অসুস্থ লাগতে শুরু করে।” তিনি স্থানীয়দের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন দ্বীপটিতে।
টোকারা দ্বীপপুঞ্জে মোট ১২টি দ্বীপ রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র সাতটিতে মানুষের বসবাস। পুরো দ্বীপপুঞ্জে জনসংখ্যা প্রায় ৭০০ জন। অনেক দ্বীপে নেই হাসপাতাল বা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা। সবচেয়ে কাছের শহর কাগোশিমা, সেখানেও পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টা ফেরি ভ্রমণ করতে হয়।
বর্তমান ভূকম্পন পরিস্থিতির কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় অনেক গেস্টহাউস নতুন করে অতিথি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এসব গেস্টহাউসকে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করা হয়েছে, যেন তারা বাসিন্দাদের অতিরিক্ত ফোনকল বা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বিরক্ত না করেন।
ভূমিকম্পের এই ধারাবাহিকতা ঘিরে দেশজুড়ে গুজব ছড়িয়েছে—একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প আসছে। বিশেষ করে ১৯৯৯ সালের একটি জাপানি কমিক বইতে লেখক রিও তাতসুকির করা একটি ভবিষ্যদ্বাণী নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বইটিতে বলা হয়েছিল, ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে।
এই ভবিষ্যদ্বাণীকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক আরও বাড়ছে, এবং অনেক পর্যটক তাদের নির্ধারিত ভ্রমণ বাতিল করছেন বলেও জানায় স্থানীয় গণমাধ্যম।
উল্লেখ্য, ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১,৫০০টি ভূমিকম্প হয়। তবে ২০১১ সালের প্রাণঘাতী ভূমিকম্প ও সুনামিতে ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু দেশটিকে এক গভীর নিরাপত্তা সংকটে ফেলে দেয়। এরপর থেকেই জাপানে একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প—“দ্য বিগ ওয়ান” আসার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
জাপানি সরকার আশঙ্কা করছে, এই ধরনের ভূমিকম্পে মৃত্যু হতে পারে তিন লক্ষাধিক মানুষের। এ প্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহেই সরকার নতুন করে প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। নির্মিত হচ্ছে বাধ, গড়ে তোলা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র। সরকার সতর্ক করে বলেছে, “আরও অনেক কিছুই করা বাকি।”