বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় পশুপালন অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনিমেল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম, অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান, পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মো. মোহাম্মদ আল-মামুনসহ অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
লিখিত বক্তব্যে পশুপালন অনুষদ ছাত্র সমিতির পক্ষে জামিল হোসেন বলেন,
“পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে কাজ করছে। অথচ গত ২৯ জুন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে কম্বাইন্ড ডিগ্রিকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া হবে।’ এই বক্তব্য অপমানজনক, বৈষম্যমূলক ও হতাশাজনক। এতে পশুপালন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।”
তিনি আরও দাবি করেন, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে (সায়েন্টিফিক অফিসার/সমমান) পশুপালন গ্র্যাজুয়েটদের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৮০ সালের মতো বর্তমান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে ‘ডিরেক্টর অফ অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি’ ও ‘ডিরেক্টর অফ ভেটেরিনারি সার্ভিসেস’—দুই ভাগে বিভক্ত করে পশুপালন ও ডিভিএম গ্র্যাজুয়েটদের জন্য আলাদা সুযোগ নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিজুল হক বলেন,
“দেশে উৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই কৃষি খাত উন্নত হচ্ছে না। যদি কেবল কম্বাইন্ড ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, দেশের প্রাণিসম্পদ খাত ধ্বংসের মুখে পড়বে। কারণ, তারা মূলত চিকিৎসা ক্ষেত্রে দক্ষ, উৎপাদনে নয়। উন্নত দেশগুলোতে পশুপালন ও চিকিৎসা আলাদা শাখা, আমরাও সে পথ অনুসরণ করা উচিত।”
অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন,
“উচ্চপর্যায়ের একজন উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এমন বৈষম্যমূলক মন্তব্য অনভিপ্রেত। তথ্য-প্রমাণ বিবেচনা করে বক্তব্য দেওয়া উচিত।”
অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই চিকিৎসা ও উৎপাদনকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদ চালু করা হয়েছে। তাই উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।”
অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম বলেন,
“প্রাণী অসুস্থ হলে চিকিৎসা দরকার, তবে সুস্থ রাখতে বিজ্ঞানভিত্তিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্ব আরও বেশি। চিকিৎসা ও উৎপাদন—দুই ক্ষেত্রের সমান গুরুত্ব না দিলে প্রাণিসম্পদ খাত টেকসই হবে না।”
উল্লেখ্য, বাকৃবি-তে পশুপালন (Animal Husbandry) ও ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (DVM) ডিগ্রি আলাদা অনুষদ থেকে প্রদান করা হয়। তবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দুটি ডিগ্রি একত্রে (কম্বাইন্ড) প্রদান করা হয়। এ কারণে চাকরির ক্ষেত্রে পশুপালন গ্র্যাজুয়েটরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। শিক্ষার্থীরা বলেন, এ সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে একাডেমিক ও পেশাগত সংকট আরও বাড়বে।
বাকৃবি প্রতিনিধি, মো. আমানউল্লাহ।