বিজ্ঞাপন
বরং দিন দিন আরও বেড়ে চলছে মানব পাচার। সাধারণ মানুষের জীবনকে পুঁজি করে কোটি টাকার স্বপ্নে বিভোর এসব পাচারকারী চক্র।
সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার দিকে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন অনেকের পূরণ হলেও, অনেকেই মাঝ সমুদ্রে প্রাণ হারান। কেউ কেউ আবার দালালদের ফাঁদে পড়ে জিম্মি হন, হয়ে ওঠেন সমুদ্রের খাবার। আর যারা মালয়েশিয়ায় পৌঁছান, তাদের অনেকের জীবনের গল্প শোনার পর কঠিন হৃদয়ের মানুষও চোখের পানি আটকাতে পারেন না।
এমনই এক ভয়ঙ্কর মানব পাচার চক্রের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ গোয়ালিয়া পালং তথা 'টাইংগা কাটার' বাসিন্দা মৃত মো. কালুর পুত্র নুরুল কবির বাদশার বিরুদ্ধে।
তিনি এলাকার চিহ্নিত মানব পাচারকারী ও এই চক্রের মূল গডফাদার হিসেবে পরিচিত। বহু বছর ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও এখনও পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো দৃশ্যমান তৎপরতা নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাদশার নেতৃত্বে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী মানব পাচারকারী সিন্ডিকেট। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও কক্সবাজারের নানা অঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নানা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এনে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। মুক্তিপণ দিতে না পারলে, বিশেষ কৌশলে নৌপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে আরও অনেক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি জড়িত বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের দাবি, পূর্ব ও পশ্চিম গোয়ালিয়া মিলে গড়ে ওঠা এই মানব পাচার চক্রের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে হুমকির মুখে পড়বে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।
স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, টেকনাফের থেকেও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে খুনিয়া পালং-এর হিমছড়ি ও 'মিনি বান্দরবান'খ্যাত রূপসী গোয়ালিয়া পর্যটন এলাকায়। মানব পাচারের কারণে এখানকার সামাজিক পরিবেশও হুমকির মুখে।
এ বিষয়ে রামু উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
এদিকে, এই বিষয়ে জানতে চাইলে নুরুল কবির বাদশা বলেন, "২০১৩ সালে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলাম এবং ওই সময় আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এরপর থেকে আমি আর এ কাজে জড়িত নই। বর্তমানে আমি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে বৈধভাবে লোক পাঠাই মালয়েশিয়ায়।"
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক যুবক জানান, "খুনিয়া পালংয়ের মানব পাচারের জনক হচ্ছে বাদশা। সে এ ব্যবসা শুরু করার পর কখনও বন্ধ করেনি, এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে দেখানোর জন্য কয়েকজনকে প্লেনে পাঠালেও বেশিরভাগই সমুদ্রপথে পাচার হয়। মূল পাচারকারীর ভূমিকা পালন করে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আনু। সমস্ত লেনদেন হয় তার হাত দিয়ে।
-মোহাম্মদ শাহজাহান, রামু উপজেলা প্রতিনিধি