বিজ্ঞাপন
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী দেলাওয়ার হোসেন।
শনিবার (৫ জুলাই) বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভোলারহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ভোট কেন্দ্র কমিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন,
“পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কেউ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এতে বিরোধী দল শক্তিশালী হবে, সংসদ শক্তিশালী হবে, রাষ্ট্রের কাঠামোও শক্তিশালী হবে। এজন্যই আমরা ও অন্যান্য দলগুলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের জোর দাবি জানাচ্ছি। বিএনপি ও আরও দুটি দল বাদে সব দলই পিআর পদ্ধতির পক্ষে। বিএনপির আশঙ্কা আমরা বুঝতে পারছি না। হয়তো তারা জিততে পারবে না, সরকার গঠন করতে পারবে না—এই ভয়েই পিআর পদ্ধতি চায় না।”
তিনি আরও বলেন,
“পিআর পদ্ধতি না থাকার কারণেই মমতাজের মতো গায়িকা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্যের কাজ আইন তৈরি করা, আর স্থানীয় সরকারের (মেম্বার-চেয়ারম্যান) কাজ জনগণের উন্নয়ন। মমতাজের মতো গায়িকারা এমপি হলে তারা কীভাবে আইন প্রণয়ন করবেন? তারা আইন বুঝবেন? তাই তারা স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নের কাজেই জড়িত থাকেন, যা তাদের কাজ নয়। আমরা মনে করি, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরাই সংসদে বসতে পারবেন।”
সরকারকে তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন,
“দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। এই ধ্বংসস্তূপের ওপর নির্বাচন দিলে তা হবে ‘আওয়ামী মার্কা’ নির্বাচন। দিনের ভোট রাতে হবে, ভোটকেন্দ্র দখল হবে, কালো টাকার ছড়াছড়ি হবে। তাই আগে মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার করতে হবে।”
দেলাওয়ার হোসেন আরও বলেন,
“একটি দল বলছে, তারা ক্ষমতায় গিয়ে বিচার করবে। কী বিচার করবেন? এখনই তো স্পষ্ট—মামলা বাণিজ্য চলছে, টাকা দিলেই মামলা থেকে অব্যাহতি, না দিলে মামলা চলবে। তাহলে তাদের বিচার কতটা নিরপেক্ষ হবে? দেশের জনগণ এতটা বোকা নয়। যারা আমাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে, গুম-খুন করেছে, অন্যায়ভাবে জেল দিয়েছে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে—তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।”
তিনি বলেন,
“এক বছর পার হলেও ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন হয়নি। এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। এই সরকার নির্বাচিত নয়, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বসানো হয়েছে। তাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত, যাঁরা রক্ত দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছেন, সেই জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। একটি নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এত বড় গণঅভ্যুত্থানের কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতিও নেই।”
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,
“সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এ সরকার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে কিনা, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। পাটগ্রামে থানা ভাঙচুর করে আসামি ছিনতাই করা হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে ভোটকেন্দ্র নিরাপদ থাকবে কীভাবে? ভোটের বাক্স নিয়েও পালিয়ে যাবে কেউ কেউ! তাই রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া, সুষ্ঠু পরিবেশ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে দেলাওয়ার বলেন,
“আমরা নির্বাচিত হলে ঠাকুরগাঁওয়ে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করব। সরকারি হাসপাতালগুলো আধুনিক করব, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল নিশ্চিত করব। আমার স্বপ্ন, ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো বেকার যুবক থাকবে না। প্রশিক্ষণ, বিনা সুদের পুঁজি ও উদ্যোগ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করব। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্য পান, এজন্য শিল্প কারখানা স্থাপন করব, যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং কৃষকরাও উপকৃত হন।”
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও জেলায় মেডিকেল কলেজ, কৃষি কলেজ বা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন,
“এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করা হয়েছে, দ্রুত বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।”
সকল ধর্মাবলম্বীর উদ্দেশে তিনি বলেন,
“জামায়াতে ইসলামী ইনসাফ ও সাম্যের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে চায়। আমরা ক্ষমতায় গেলে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবাই সমান অধিকার পাবে। আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘুদের জমি দখল ও নির্যাতন করেছে, আমরা তা বন্ধ করব।”
অনুষ্ঠানে জেলা জামায়াতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. কফিল উদ্দিন আহমেদ, রুহিয়া থানা জামায়াতের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
-মোঃহুমায়ুন কবির রেজা ঠাকুরগাঁও