Logo Logo
বিশ্ব

খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে গাজায় ৭৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত


Splash Image

ছবি : সংগৃহীত।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্য সহায়তা নিতে গিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৮৯১ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।


বিজ্ঞাপন


শনিবার (৫ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে পরিচালিত বিতর্কিত প্রকল্প গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এ ঘটনায় নতুন করে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ বলেন, “এই সংখ্যাটি একেবারে প্রাথমিক হিসাব। বাস্তবে নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ক্ষুধার্ত পরিবারগুলো যখন বাঁচার শেষ আশায় খাদ্য সংগ্রহ করতে আসে, তখনই এসব হামলা হচ্ছে।”

তিনি জানান, “ক্ষুধা এমন চরমে পৌঁছেছে যে, অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ পুরো দিন অভুক্ত থাকছেন।”

জিএইচএফ প্রকল্প চালু হয় ২০২৫ সালের মে মাসের শেষদিকে। শুরু থেকেই এটি ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূত্র অভিযোগ করেছে, সহায়তা কেন্দ্রে খাদ্যের জন্য জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনা ও প্রকল্পের নিরাপত্তাকর্মীরা গুলি চালাচ্ছেন।

বার্তাসংস্থা এপি জানায়, জিএইচএফ প্রকল্পে নিয়োজিত কয়েকজন মার্কিন ঠিকাদার স্বীকার করেছেন, “নিরাপত্তাকর্মীরা অস্ত্র নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করছে।”

তবে জিএইচএফ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এক বিবৃতিতে জানায়, “এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমরা আমাদের কার্যক্রম এবং কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালনা করি।”

বির্তক সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জিএইচএফ-এর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “জিএইচএফ-ই একমাত্র সংস্থা, যা এখনো গাজায় কার্যকরভাবে খাদ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।”

জুন মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্পে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেয়। তবে একই সময় দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসে জিএইচএফ-এর এক সাইটে গ্রেনেড হামলায় দুই মার্কিন কর্মী আহত হন। তাদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই প্রকল্পকে “অমানবিক ও প্রাণঘাতী সামরিকীকৃত সহায়তা কার্যক্রম” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, “এই প্রকল্প কেবল আন্তর্জাতিক উদ্বেগ প্রশমনের একটি মুখোশ। প্রকৃতপক্ষে, এটি ইসরায়েলের গণহত্যার আরেকটি রূপ।”

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ প্রকল্প অবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জোর করে সামরিক নিয়ন্ত্রিত সহায়তা কেন্দ্রে জড়ো করা হচ্ছে, যেখানে প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

তবে গাজার বহু বাসিন্দা বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছেন।

মাজিদ আবু লাবান নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, “আমার বাচ্চারা টানা তিন দিন কিছু খায়নি। তাই বাধ্য হয়ে সহায়তার আশায় রওনা হই। রাতের অন্ধকারে নেটসারিম করিডোরের দিকে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি সেনারা আমাদের ওপর গুলি ছোড়ে। প্রাণ বাঁচাতে সবাই দিগ্বিদিক পালাতে থাকে।”

গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ত্রাণ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, অবিলম্বে কার্যকর ও নিরপেক্ষ উপায়ে সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা না হলে এ সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

আরও পড়ুন

জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলন
জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলন
নড়াইলে জেলা বিএনপির মৌন মিছিল ও সমাবেশ
নড়াইলে জেলা বিএনপির মৌন মিছিল ও সমাবেশ