Logo Logo
বিশ্ব

কেন নিজ দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে এসেছিলেন দালাই লামা


Splash Image

ছয় দশক আগের এক রাতে ইতিহাসের বাঁকবদলের এক নিঃশব্দ পদচারণা শুরু হয়েছিল হিমালয়ের গভীর অন্ধকারে। দূর থেকে তখন শোনা যাচ্ছিল কামানের গর্জন।


বিজ্ঞাপন


সেই ভয়াবহ মুহূর্তে তিব্বতের ২৩ বছর বয়সী ধর্মীয় নেতা দালাই লামা সেনা পোশাকে ছদ্মবেশে নিজের প্রাসাদ ত্যাগ করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই—জীবন বাঁচানো এবং স্বাধীনতার পথে যাত্রা।

১৯৫৯ সালের সেই মার্চের রাতে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে তিনি পাড়ি দেন দুর্গম পাহাড়ি পথ। টানা দুই সপ্তাহ পর তিনি পৌঁছান ভারতের হিমাচল প্রদেশে। এই পালিয়ে আসার পেছনে ছিল দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকট, যার শুরু ১৯৫০ সালে চীনের তিব্বত দখলের মাধ্যমে।

চীনের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫১ সালে দুই পক্ষের মধ্যে হয় একটি ১৭ দফা চুক্তি, যেখানে বলা হয়েছিল—তিব্বত চীনের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে থাকবে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই চুক্তি ভঙ্গ হতে থাকে। ফলে জন্ম নেয় গভীর অবিশ্বাস এবং উত্তেজনা।

এরই মধ্যে ১৯৫৯ সালে চীনা সেনাবাহিনীর এক জেনারেল দালাই লামাকে আমন্ত্রণ জানান একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। শর্ত ছিল, তাঁকে কোনো দেহরক্ষী ছাড়া সেখানে আসতে হবে। এই আমন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তিব্বতের প্রশাসনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা আশঙ্কা করে, এটি একটি কূটকৌশল—যার মাধ্যমে দালাই লামাকে হয়তো হত্যা অথবা অপহরণ করা হবে।

সেই ভয়াবহ প্রেক্ষাপটে ১০ মার্চ লক্ষাধিক তিব্বতি নাগরিক দালাই লামার প্রাসাদের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে। সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তিব্বতের সশস্ত্র যোদ্ধারা। দালাই লামার প্রাসাদেও শুরু হয় গোলাবর্ষণ। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় এবং বিশিষ্ট উপদেষ্টাদের পরামর্শে অবশেষে তিনি তিব্বত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।

১৭ মার্চ রাতে দালাই লামা তিব্বতের মন্ত্রিসভার সদস্য, পরিবারের সদস্য এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করেন। চীনা নজরদারি এড়িয়ে, তিব্বতি সেনাদের পোশাক পরে তারা পাড়ি দেন হিমালয়ের বিপদসংকুল পথ। দীর্ঘ ১৩ দিন পরে, ৩১ মার্চ, তাঁরা পৌঁছান ভারতের অরুণাচল প্রদেশে। সেখানে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান ভারতীয় সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস।

তবে দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়া সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না ভারতের জন্য। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের শঙ্কায় পড়েন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ এপ্রিল তিনি ঘোষণা দেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দালাই লামাকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

এরপর থেকেই ভারতেই অবস্থান করছেন তিব্বতের ১৪তম দালাই লামা। ভারতে তিনি গড়ে তুলেছেন তিব্বতের প্রবাসী সরকার। এখান থেকেই তিনি তিব্বতের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষণের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলন
জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলন
নড়াইলে জেলা বিএনপির মৌন মিছিল ও সমাবেশ
নড়াইলে জেলা বিএনপির মৌন মিছিল ও সমাবেশ