মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
বিজ্ঞাপন
কারণ, সম্মেলন শুরুর দিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিকসের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
সোমবার (৭ জুলাই) বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, ট্রাম্প এক সামাজিক মাধ্যম পোস্টে ব্রিকসকে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি অনুসরণকারী জোট’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন—এই নীতিকে সমর্থন জানালে কোনো দেশই ছাড় পাবে না। তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে।
রোববার নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “যেকোনো দেশ যদি ব্রিকস-এর যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতির সঙ্গে নিজেকে জড়ায়, তবে তাদের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এই নীতিতে কোনো ব্যতিক্রম থাকবে না। ধন্যবাদ!”
তবে তিনি ঠিক কী ধরনের নীতিকে ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ বলছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিকস নেতারা সম্মিলিতভাবে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সেখানে তারা বলেন—“শুল্ক বাড়ানোর প্রবণতা বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য হুমকি।” যদিও ট্রাম্পের নাম বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সরাসরি কোনো মন্তব্য করা হয়নি, বিবৃতিটি যে তার শুল্ক হুমকির প্রতিক্রিয়ায় এসেছে, তা স্পষ্ট।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “ব্রিকস এখন একবিংশ শতাব্দীর নতুন বৈশ্বিক বাস্তবতার প্রতিফলন। আমরা এমন এক সময়ে পৌঁছেছি, যেখানে বহুপাক্ষিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে।”
তিনি ব্রিকসকে তুলনা করেছেন ন্যাম (জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন)-এর সঙ্গে, যা স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে দুই পরাশক্তির মধ্যে নিরপেক্ষ থাকার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল।
এবারের সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা এবং অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত আছেন। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে ভার্চুয়ালি অংশ নিচ্ছেন।
২০০৯ সালে গঠিত এই জোট শুরুতে ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে। এবার ব্রিকসের সদস্যপদ পেয়েছে মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রথমবারের মতো সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া।
বর্তমানে ব্রিকস বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এবং বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। এ ছাড়া, জোটটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ প্রতিফলনের লক্ষ্যে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।
ব্রিকস নেতারা বলেন, “যদি বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা বর্তমান বাস্তবতা প্রতিফলিত না করে, তবে ব্রিকসের উচিত এটি আধুনিক করে তোলা।”
এই সম্মেলন শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের বৈশ্বিক নেতৃত্বের নতুন সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক বার্তার প্রতিফলন। ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি যেমন আগাম নির্বাচনী রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে, তেমনি ব্রিকসের পক্ষ থেকে জবাবও ইঙ্গিত দিচ্ছে—পৃথিবীর ক্ষমতার ভারসাম্য ধীরে ধীরে পশ্চিমা আধিপত্য থেকে সরে আসছে।