বিজ্ঞাপন
শুধু আধুনিক মনীষীরাই নয়, ইসলামের দৃষ্টিতেও সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
‘যদি কিয়ামত শুরু হয়ে যায় আর কারো হাতে একটি চারা থাকে, সে যদি তা রোপণ করতে পারে, তবে তার উচিত রোপণ করে ফেলা।’ (মুসনাদে আহমদ : ১২৯০২)
অনেকে ভাবতে পারেন, কিয়ামতের মতো ভয়াবহ মুহূর্তেও কেন গাছ রোপণের কথা বলা হলো?
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ইউসুফ আল-কারজাভি (রহ.) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
‘‘এর মাধ্যমে রাসুল (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন—কখনো সময়কে অবহেলা করা যাবে না। মুহূর্তকেও কাজে লাগাতে হবে, পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন।’’ (মুমিন জীবনে সময়, পৃষ্ঠা ৮৭)
তিনি আরও বলেন,
‘‘যে মুসলিম বরকতময় জীবন পেতে চায়, তার উচিত ইসলামী রুটিন মেনে চলা। এর প্রথম শর্ত—সকালে ঘুম থেকে ওঠা ও রাতের শুরুতেই ঘুমানো।’’ (মুমিন জীবনে সময়, পৃষ্ঠা ৪৪)
রাসুল (সা.)-ও দোয়া করেছেন—
‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য ভোরবেলায় বরকত দান করো।’ (আবু দাউদ : ২৬০৬)
আজকের দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, মুসলিমরা রাতভর নিরর্থক কাজে সময় কাটিয়ে ফজর পর্যন্ত জেগে থাকে, পরে কোনো মতে নামাজ পড়ে আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
দিনের কাজ, ইবাদত, জ্ঞান অর্জন—সবই পিছিয়ে পড়ে।
ইউসুফ আল-কারজাভি বলেন—
‘‘আজকের মুসলিমদের জন্য এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, তারা রাতভর জাগে, ফলে ফজরের বরকত থেকে বঞ্চিত হয়।’’ (মুমিন জীবনে সময়, পৃষ্ঠা ৪৫)
মধ্যযুগের মুসলিমরা কেন সফল ছিল? কারণ, তারা সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করত।
ইবনে খালদুন, ইবনে সিনা, আল খোয়ারিজমি, জাবির ইবনে হাইয়ানের মতো মনীষীরা রাত-দিন পরিশ্রম করেছেন, জ্ঞান অর্জন করেছেন, সমাজ-রাষ্ট্র ও দাওয়াহ সবকিছুই সামলেছেন। তাদের পরিশ্রমের ওপর দাঁড়িয়েই আজকের ইউরোপ-আমেরিকার আধুনিক সভ্যতা।
আজ আমরা মুসলিমরা সময় নষ্ট করি নানা অজুহাতে।
ইউসুফ আল-কারজাভি বলেন,
‘‘সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে—অন্যমনস্কতা ও ‘আগামীকাল’ বলে কাজ ফেলে রাখা। আজকের কাজ কাল করলে, সে কাল কখনো আসে না!’’
তাই কাঙ্ক্ষিত সফলতা আর ধরা দেয় না।
উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.) সময়ের গুরুত্ব বোঝাতে বলেছিলেন—
‘‘যদি আজকের কাজই আমাকে পরিশ্রান্ত করে, তবে কালকের কাজও আজ জমা হলে কী হবে?’’ (মুমিন জীবনে সময়, পৃষ্ঠা ১০৬)
একই কথা বলেন বিখ্যাত সুফি মনীষী ইবনে আতা—
‘‘সময়ের অধিকার কখনো ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। প্রতি মুহূর্তেই নতুন দায়িত্ব আসে, তাই সময়ের কাজ সেই সময়েই করতে হয়।’’
ইউসুফ আল-কারজাভি আরও বলেন—
‘‘জীবনকে এমনভাবে সাজাও, যেন দুনিয়ার কাজগুলো দীর্ঘমেয়াদি ধরে করছ, আর আখিরাতের কাজগুলো কালই মারা যাবে—এমন গুরুত্ব দিয়ে করছ।’’
আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলতেন—
‘‘নিজের হিসাব কেয়ামতের আগেই করে নাও; নিজের আমলগুলোও ওজন করে দেখো, কারণ সেদিন আর সুযোগ থাকবে না।’
সময়ই জীবন। যে সময়ের সদ্ব্যবহার করতে জানে, সে-ই দুনিয়া ও আখিরাতের সফল মানুষ।
ইউসুফ আল-কারজাভির একটি মূল্যবান উক্তি দিয়ে শেষ করা যায়—
‘‘কর্মই জীবনের প্রকৃত মিশন। যে মানুষ কাজ করে না, তার বেঁচে থাকারও অধিকার নেই! জীবিত থাকলে অবশ্যই কাজ করতে হবে—দ্বীনি হোক কিংবা দুনিয়াবি।’