ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস (ইউকেএমটিও) জানায়, সোমবার গ্রিস পরিচালিত এবং লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ ‘ইটার্নিটি সি’ ২৫ জন ক্রুসহ হুথি বিদ্রোহীদের রকেটচালিত গ্রেনেড হামলার শিকার হয়। এতে জাহাজটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হামলার পর রাতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। মঙ্গলবারও আক্রমণ অব্যাহত ছিল। হুথি গোষ্ঠী দাবি করেছে, ইসরায়েলের গন্তব্যে থাকা সন্দেহেই তারা জাহাজটিতে হামলা চালায় এবং কয়েকজন নাবিককে তারা “নিরাপদ স্থানে” নিয়ে গেছে।
তবে ইয়েমেনে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, হুথিরা বেশ কয়েকজন জীবিত নাবিককে অপহরণ করেছে এবং দ্রুত তাদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
ফিলিপাইনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার সময় জাহাজটিতে থাকা ২৫ জন নাবিকের মধ্যে ২১ জন ছিলেন তাদের নাগরিক। বাকি নাবিকদের মধ্যে একজন রাশিয়ান নাগরিক রয়েছেন যিনি গুরুতর আহত হয়ে একটি পা হারিয়েছেন।
এর আগে গত রোববার লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী আরেকটি গ্রিস-পরিচালিত পণ্যবাহী জাহাজ ‘ম্যাজিক সিজে’-তেও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছিল হুথিরা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এটাই তাদের দ্বিতীয়বারের আক্রমণ, যাতে জাহাজ ডুবে গেছে।
হুথিদের দাবি, ‘ম্যাজিক সিজে’ এমন একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন, যারা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বন্দরগুলোতে পণ্য পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেছে।
হুথিদের প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সশস্ত্র সদস্যরা জাহাজে উঠে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটায়, যার ফলে জাহাজটি ধীরে ধীরে ডুবে যায়। ‘ম্যাজিক সিজে’ জাহাজের ২২ জন নাবিককে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধার করে নিরাপদে স্থানান্তর করে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত হুথিরা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে প্রায় ৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এতে তারা চারটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, পাঁচটি জাহাজ জব্দ করেছে এবং অন্তত সাতজন নাবিককে হত্যা করেছে।
হুথিরা দাবি করে, তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এই হামলা চালাচ্ছে এবং কেবলমাত্র ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। তবে বাস্তবে তারা মাঝে মাঝেই নিরপেক্ষ বাণিজ্যিক জাহাজেও হামলা চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণকারীরা জানিয়েছে।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, “হুথিদের এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা আন্তর্জাতিক নৌ চলাচল এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি।” যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, নৌ চলাচল রক্ষায় তারা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছে।
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সমুদ্র সংস্থা (IMO)-এর মহাসচিব আর্সেনিও ডোমিঙ্গুয়েজ বলেন, “শান্তিপূর্ণ সময়ের পর এমন হামলা আন্তর্জাতিক আইন এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতার জঘন্য লঙ্ঘন। এসব হামলায় নিরীহ নাবিক ও উপকূলবর্তী সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”