বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ‘জিএইচএফ’ (হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন)-এর সামনে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারান হতভাগ্য এই ৩৪ জন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সেনারা সরাসরি সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগেই এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোকে “মৃত্যুকূপ” বা “মানব হত্যাযন্ত্র” হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া সামির শায়াত নামের এক ব্যক্তি বলেন, “যে ব্যাগে খাবার নেওয়ার কথা ছিল, সেটাই হয়ে গেল মরদেহ মোড়ানোর কাপড়। ওরা আমাদের নিঃসন্দেহে মৃত্যুফাঁদে ফেলেছে।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ বারবাখ বলেন, “ওরা আমাদের প্রতারিত করে। আগে খাবারের ব্যাগ হাতে দিতে দেয়, তারপর শিকারি যেমন হাঁসকে গুলি করে, তেমন করে গুলি চালায়। এটা ছিল পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ।”
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম জানান, হামলার আগে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়নি। বর্তমানে রাফাহ শহরে জিএইচএফ-এর কেবল একটি কেন্দ্র চালু থাকায় হাজার হাজার মানুষ সেখানেই সহায়তার আশায় ভিড় করছেন।
গাজায় কর্মরত চিকিৎসকদের তথ্যমতে, মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি হামলায় ৮০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের বেশিরভাগের মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু বানানোর কৌশল বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।
আল-আকসা হাসপাতালের মুখপাত্র খালিল আল-দেগরান বলেন, “আমরা হাসপাতালে এত আহত মানুষের চাপ সামলাতে পারছি না। ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ভয়াবহ ঘাটতি চলছে। অচিরেই আমাদের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
রাফাহ ছাড়াও গাজার তুফাহ এলাকায় জাফা স্ট্রিটে এক বাসায় বোমা হামলায় চারজনসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। উত্তর গাজার জাবালিয়ায় দুটি আবাসিক ভবনে হামলায় প্রাণ গেছে আরও ১৫ জনের। শাতি শরণার্থী শিবিরে সাতজন এবং বেইত হানুন শহরের উত্তর-পূর্ব অংশে ৫০টির বেশি বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলের ২৫০টি হামলার খবর নিশ্চিত করেছে আইডিএফ (ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স)।
স্থানীয় মিডিয়া অফিস জানায়, চলমান যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে ইতোমধ্যেই ৬৭ জন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। বর্তমানে ৫ বছরের কম বয়সী সাড়ে ৬ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। খাদ্য ও ওষুধের চরম সংকট ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।
এদিকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি আলোচনা কার্যত থেমে গেছে। আলোচনার মূল প্রতিবন্ধকতা— ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার কোন কোন এলাকা থেকে সরে যাবে, সেই মানচিত্র সংক্রান্ত।
হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েলের দেওয়া মানচিত্র অনুযায়ী রাফাহসহ প্রায় ৪০ শতাংশ গাজা ভূখণ্ড ইসরায়েলের দখলে থেকে যাবে। হামাসের এক প্রতিনিধি বলেন, “এই মানচিত্রে সম্মতি দিলে গাজার অর্ধেক পুনরায় দখলকৃত এলাকা হিসেবে বৈধতা পাবে, আর পুরো ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন বন্দিশিবিরে পরিণত হবে।”
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনার অচলাবস্থা কাটাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সক্রিয় হতে হবে। মানবিক সহায়তা প্রবেশ এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
তবে কাতারের রাজধানী দোহায় আজ রোববার থেকে হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিদের মধ্যে পুনরায় আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।