ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
গত শুক্রবার (১১ জুলাই) পশ্চিম উপকূলের ওই এলাকাতেই প্রাণ হারান ২০ বছর বয়সী সায়ফোল্লাহ মুসাল্লেত এবং ২৩ বছর বয়সী মোহাম্মেদ আল-শালাবি। ইসরায়েলি বসতি থেকে আগত বাসিন্দাদের হামলায় একজনকে পিটিয়ে এবং অন্যজনকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহতদের মধ্যে সায়ফোল্লাহ মুসাল্লেত মার্কিন নাগরিক। তার স্থায়ী বাসা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ফিলিস্তিনে অবস্থান করছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে তাকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ইসরায়েলি হামলাকারীরা।
অন্যদিকে মোহাম্মেদ আল-শালাবিকে গুলি করা হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে ও সায়ফোল্লাহকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলেও ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা কোনো চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। হামলাকারীরা মূল রাস্তা অবরোধ করে রাখায় শালাবি চিকিৎসার সুযোগও পাননি। যখন অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছায়, তখন তার দেহ নিথর।
শালাবির বাবা জার্মান সংবাদমাধ্যম ডিডাব্লিউকে বলেন, “শুক্রবার সকালেই ও আমাকে জানিয়েছিল, বিয়ে করতে চায়। সেই মতো আমরা একটি পরিবারের সঙ্গে কথাও বলতে শুরু করেছিলাম। আর এখন ওকে কবর দিচ্ছি।”
গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের টাম্পা শহর থেকে ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ এলাকায় এসেছিলেন শালাবি। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের সঙ্গে গ্রীষ্মকাল কাটানো। তার এক আত্মীয়া, ডায়ানা হালুম জানান, “আমরা একসঙ্গে গোটা ফিলিস্তিন ঘুরেছি। এমন কিছু যে ঘটতে পারে, কখনো কল্পনাও করিনি।”
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে স্বীকার করেছে, পশ্চিম উপকূলে তাদের এক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তবে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। সূত্র জানায়, “পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপাতত আমরা কোনো বিবৃতি দিচ্ছি না। তবে কনসুলেটের মাধ্যমে সবরকম সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বেশ কিছু ফিলিস্তিনি নাগরিক পশ্চিম উপকূলে একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি নাগরিকদের হাতে তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
তবে ইসরায়েলি পক্ষের অভিযোগ, ওই বিক্ষোভকারীরা তাদের নাগরিকদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ে মারে। এই অভিযোগ থেকেই শুরু হয় সংঘর্ষ। ইসরায়েলি বাসিন্দারা পরে ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে এবং সেখানেই দুই তরুণের ওপর আক্রমণ চালায়।
এই ঘটনার পর পশ্চিম উপকূলজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করেছে, ঘটনাটি শুধু মানবিক নয়, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। মার্কিন নাগরিক নিহত হওয়ার বিষয়টি ঘিরেও কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে নড়েচড়ে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষকরা।
পশ্চিম উপকূলে চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতা যেন কখনোই শেষ হচ্ছে না। প্রতিটি নতুন মৃত্যু, প্রতিটি অকাল ঝরে যাওয়া প্রাণ একটি দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের করুণ প্রতিচ্ছবি। সায়ফোল্লাহ ও মোহাম্মেদ আল-শালাবি সেই সংকটের নতুনতম বলি—যাদের স্বপ্ন রয়ে গেল অপূর্ণ, আর পরিবারগুলো ডুবে থাকল অনন্ত শোকে।