ভোরের বাণী গ্রাফিক্স
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে রোববার ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় দীর্ঘ ২২ ঘণ্টা পর ভুক্তভোগী সাংবাদিকের ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করেছেন প্রক্টর। তবে মোবাইলে থাকা সব তথ্য-প্রামাণাদি উধাও করে দিয়েছেন অভিযুক্তরা।
এদিকে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে শাখা ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্র মজলিস, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়া। বিবৃতিতে সংগঠনগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া রোববার দুপুরে হামলায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা হলেন, আরিফ বিল্লাহ, রবিউল আলম এবং নুর-ই-আলম। অভিযুক্তরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান, আফসানা পারভিন তিনা, সাব্বির, রিয়াজ মোর্শেদ, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, সৌরভ, সোহাগ ও পান্না এবং ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, রাকিব, মশিউর রহমান রিয়ন ও হৃদয়সহ ২০-২৫ জন।
ক্যাম্পাস সূত্রে, এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে আন্তঃসেশন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে জড়ায় অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়ররা। এসময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহর মুঠোফোন কেড়ে নেন বিভাগের ছাত্রী আফসানা পারভিন তিনা। পরে তার উসকানিতে চারপাশ থেকে একদল শিক্ষার্থী সাংবাদিককে মারধর শুরু করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া আরও দুই সাংবাদিককে মারধর করা হয়।
এদিকে বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে নতুন ইস্যু তৈরির চেষ্টা করছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করছেন, প্রক্টরের সামনে তাদের বিভাগের ছাত্রী আফসানাকে মারধর করা হয়েছে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ওই ছাত্রীকে মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ইমন বলেন, ‘হট্টগোলের সময় দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারধর করছে। পাশে থাকা আরেক সাংবাদিক ওই ঘটনার ভিডিও করছিলেন। ভিডিও বন্ধ না করায় এক পর্যায়ে তাকেও লাথি মারা হয়। কোন ছাত্রীকে মারধরের বিষয়টি লক্ষ্য করিনি।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সহ সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। কোন মেয়েকে মারধর করতে দেখি নি। আমার দেখার বাইরে কিছু হয়েছে কিনা জানি না। তবে ঘটনা শেষ হওয়ার পর প্রক্টর স্যার ও সমন্বয়ক সুইট ভাই শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছিলেন। এসময় সেই মেয়ে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে সে নিজেকে অসুস্থ দাবি করলে তাকে প্রক্টর স্যারের গাড়িতে করে মেডিকেলে পাঠানো হয়।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ছাত্রীর গায়ে কোন আঘাত লাগার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তার প্যানিক অ্যাটাকের হিস্ট্রি থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত দেখাচ্ছে। এ ছাড়া মেডিকেল সেন্টারের একাধিক সূত্র জানায়, মেয়েটিকে স্বাভাবিকই মনে হয়েছে। আক্রান্ত না হয়েও সে আক্রান্তের অভিনয় করছে বলে মনে হচ্ছে। এদিকে আফসানার প্যানিক অ্যাটাকের সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছে তার সহপাঠীরা।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ ছাত্রী মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এমন কোন ঘটনা দেখেননি বলে জানান।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ বলেন, মোবাইল কেন নেওয়া হলো জানতে চাইলে ৮-১০ জন ছেলে এসে আমাকে ঘিরে ধরে এলোপাথাড়ি চর, থাপ্পড় ও ঘুষি মারতে থাকে। পরে সেখানে সাংবাদিক নুর ও রবিউল আসলে তাদেরকেও চড়-থাপ্পড় ও লাথি মারা হয়।
ভুক্তভোগী রবিউল বলেন, তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। বিশেষ করে অর্থনীতি বিভাগের নাহিদ হাসান আমার তলপেটে লাথি মারে।
অভিযুক্ত নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়। এসময় আমি সাংবাদিক কাউকে মারিনি। আমার গলা ধরছে তখন আমি কি করব। এ কথা বলেই তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।
আরেক অভিযুক্ত আফসানা বলেন, ‘বিভাগের স্যাররা বিষয়টি দেখছেন। এই বিষয়ে আমার আর কোন মন্তব্য নাই।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. এয়াকুব আলী বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণ বরদাশত করা হবে না। বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- ইদুল হাসান,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।