ছবি : সংগৃহীত।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য যেন কোনোভাবে বিনষ্ট না হয়—এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।”
সোমবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণফোরামের প্রয়াত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টুর স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শোকসভায় দেশের প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দল ও প্রগতিশীল সংগঠনের নেতারা অংশগ্রহণ করেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম।
ড. কামাল হোসেন বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনো তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, তার মূল অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। অথচ রাজনৈতিক অনৈক্য এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণের কারণে সেই অঙ্গীকার পূরণ হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গঠিত তিন জোটের রূপরেখা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে আজকের অনেক সংকট এড়ানো যেত। সেই ব্যর্থতা থেকেই চব্বিশের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে।”
ড. কামালের মতে, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে, যা এ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।” তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেশ গড়ার কাজে তারুণ্যের এই শক্তিকে আরও সুসংগঠিত ও সচেতনভাবে কাজে লাগাতে হবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান দায়িত্ব প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের অন্যতম প্রধান কাজ হবে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।”
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে, তা উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। সরকারকে অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে বিষয়গুলো মোকাবিলা করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।”
প্রয়াত গণফোরাম সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসীন মন্টুকে স্মরণ করে ড. কামাল বলেন, “মন্টু সবসময় স্বপ্ন দেখতেন একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার। তিনি আপসহীন, নীতিনিষ্ঠ এবং দেশপ্রেমিক একজন নেতা ছিলেন। তার আদর্শ ও প্রেরণাই আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হয়ে উঠুক।”
এই শোকসভা ও আলোচনা অনুষ্ঠানটি জাতীয় রাজনীতিতে নতুন করে সংহতির বার্তা দেয়, যেখানে মতপার্থক্য সত্ত্বেও সবাই গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন।