নিস্তব্ধ গোপালগঞ্জ শহরের ভোরের বাণী মোড়।
বিজ্ঞাপন
সেনাবাহিনীর অধীনে পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত চারজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে গোপালগঞ্জ শহরের পরিবেশ অনেকটাই থমথমে। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়কগুলোতে যানবাহনের তেমন চলাচল ছিল না। বন্ধ ছিল অধিকাংশ দোকানপাট ও বাজার। যদিও অলিগলিতে কিছু মানুষের যাতায়াত দেখা গেছে, এবং কিছু এলাকায় খাবারের দোকান ও হোটেল খোলা ছিল।
সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ থাকলেও, বিভিন্ন মোড়ে চায়ের দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোতে স্থানীয় লোকজন জড়ো হতে দেখা যায়। কাঁচা বাজার এলাকায় কিছু ফলের দোকান খোলা ছিল, সেখানে কিছুটা বেচাকেনা চলেছে।
সকালবেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এখনো রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে ইট-পাটকেল ও বাঁশ। কোথাও কোথাও গাছ কেটে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে শহরের বিভিন্ন জায়গায় থাকা তোরণ, সেগুলোর ধ্বংসাবশেষ এখনো পড়ে আছে রাস্তায়। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজনকে মুখে আতঙ্কের ছাপ নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার সামনে উপস্থিত থাকা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরের রাস্তাঘাট পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের সহযোগিতা করছিলেন গ্রাম পুলিশ সদস্যরা।
শহরের বাসিন্দা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “গতকাল সংঘর্ষের সময় ঘরেই ছিলাম। আমার মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে, সঙ্গে তার মা আছে। গতকাল খাবার নিয়েও যেতে পারিনি। তাই আজ সকাল সকাল বের হয়ে সেখানে যাচ্ছি। বেলা বাড়ার পর পরিস্থিতি আবারও খারাপ হয় কি-না সেই চিন্তা করে সকালেই রওনা দিয়েছি।”
অন্যদিকে, মাহফুজ আলম নামের এক অটোচালক জানান, “কারফিউ জারি হয়েছে। তাই গাড়ি নিয়ে বের হয়নি। রাস্তাঘাটেও মানুষজন তেমন নেই। অভ্যন্তরীণ রুটের গাড়িগুলোও ছাড়েনি। তবে ঢাকাসহ দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলছে। গতকাল সংঘর্ষের পর থেকে ভয়ে আছি।”
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জ শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরিবেশ এখনও থমথমে। গোপালগঞ্জ সদর সার্কেলের পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, “পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক, তবে থমথমে। কারফিউ বলবৎ আছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকেই গোপালগঞ্জে বিশেষ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অধীনে এটি পরিচালনা করছে পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।”
এনসিপির কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তেজনার সূচনা হয় মঙ্গলবার থেকেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলতে থাকে এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে। বুধবার সকালে এনসিপির নেতারা গাড়িবহর নিয়ে শহরে ঢোকার আগেই পুলিশের গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িবহরেও হামলা চালানো হয়।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুপুরে, যখন আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে পৌরপার্ক এলাকার সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাপক সংঘর্ষ ও ভাঙচুর ঘটে।
একপর্যায়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা আশ্রয় নেন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। পরে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানযোগে তারা নিরাপদে স্থান ত্যাগ করেন। দুপুরের দিকে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। তাতেও সহিংসতা বন্ধ না হওয়ায় সন্ধ্যায় কারফিউ জারি করা হয়।
এ ধরনের উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে সাধারণ মানুষ যেমন আতঙ্কগ্রস্ত, তেমনি মানবিক সংকটেও পড়েছেন অনেকেই। হাসপাতাল, ওষুধ, খাবারসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সমস্যা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে শহরের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। অভিযান চলছে সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে।