Logo Logo
ইকোনমিক

পদত্যাগ করেছেন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ


Splash Image

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। ছবি : সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন।


বিজ্ঞাপন


ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তবে এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এর আগে, ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে দেশের ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকেই উদ্বেগ ও চাপে ছিলেন মাসুদ। বুধবার (১৬ জুলাই) তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও কাউকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান তিনি। ওয়েটিং রুমে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, "এক ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।"

ব্যাংক হিসাব তলব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্বচ্ছতার স্বার্থে ব্যাংক চেয়ারম্যানদের হিসাব তলব করা হচ্ছে। এটি ধাপে ধাপে সব ব্যাংকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। আমি এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে দেখি।”

ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এর আগে রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি রূপালী ব্যাংকের এমডি এবং ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন সোনালী ব্যাংকের এমডি। অবসরের পর দীর্ঘদিন ব্যাংকিং খাত থেকে দূরে থাকলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় গঠিত ইসলামী ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদে তাকে স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তার এই নিয়োগের সময় থেকেই ইসলামী ব্যাংকে সমালোচনা শুরু হয়। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেকেই তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে ব্যাংকের ভেতরে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়—একটি পক্ষ তার নেতৃত্বে আস্থা রাখলেও অন্য পক্ষ এতে অসন্তুষ্ট।

সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক জোবায়দুর রহমানকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে বসানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত মিলেছে। এ অবস্থায় গত ১১ জুলাই ওবায়েদ উল্লাহ মাসুদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কিছু শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে জোবায়দুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেন।

এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক মহলে অস্থিরতা আরও বেড়ে যায়, বিশেষত মাসুদ ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলবের পর। বিএফআইইউ যে চিঠি পাঠিয়েছে, সেখানে মাসুদের স্ত্রী মারজিনা বেগম ওরফে মুনমুন মাসুদ, দুই ছেলে জুন্নুন সাফওয়ান ও জুনায়েন জুলকার নায়েন তিয়ান এবং মেয়ে তাসমিয়া তারান্নুম নাওমির ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত সব তথ্য চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, তাদের নামে পরিচালিত সব ধরনের হিসাব—ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র, বন্ড, লকার সার্ভিস, শিক্ষার্থীদের ফাইল, ক্রেডিট কার্ড, প্রিপেইড বা গিফট কার্ড—সংক্রান্ত তথ্য বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি অঙ্কের সব লেনদেনের বিবরণও জমা দিতে বলা হয়েছে। এমনকি যেসব হিসাব বর্তমানে বন্ধ, সেগুলোর তথ্যও চাওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকা দুটি দলের মধ্যে একটি বিতর্কিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপকে রক্ষায় সক্রিয়। এই গ্রুপটি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ বলেও আলোচনা রয়েছে। ফলে ব্যাংকের ভবিষ্যত নেতৃত্ব ও পরিচালনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

অন্যদিকে, মাসুদের পদত্যাগের পর কে হবেন ইসলামী ব্যাংকের পরবর্তী চেয়ারম্যান—তা নিয়েও ব্যাংকিং মহলে চলছে নানা গুঞ্জন।

আরও পড়ুন

কুয়াকাটায় ঝোপের মধ্যে থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার
কুয়াকাটায় ঝোপের মধ্যে থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার
ভালুকায় বজ্রপাতে এক ব্যক্তি নিহত
ভালুকায় বজ্রপাতে এক ব্যক্তি নিহত