বিজ্ঞাপন
এতে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তির (এলজিইডি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এলাকাবাসীর দাবি, কাজের বাস্তব অগ্রগতি বিবেচনায় না নিয়েই অর্থের বিনিময়ে বিল পাশ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ‘বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (জিডিডিআইআরডিপি)’র আওতায় ১ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫০৩ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ও ১ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার ৯২৮ টাকা চুক্তিমূল্যে সড়কটির নির্মাণ কাজ পায় বোদা পঞ্চগড়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোতাহার এন্টারপ্রাইজ। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর ইউসুফ আলীর অধীনে কাজটি শুরু হয়, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ২ জুন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সড়কটিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র সাব-গ্রেডের প্রথম স্তরে বালি ও খোয়া ফেলা হয়েছে। প্রায় ২০০ মিটার সড়কের কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যেটুকু কাজ হয়েছে তাও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে— যেখানে অতিরিক্ত পরিমাণ বালি ও নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ বলেন, “সড়ক নির্মাণ তো হচ্ছে, কিন্তু বালির পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা চাই, কাজটা যেন ভালোভাবে ও টেকসই হয়।”
অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডির সার্ভেয়ার জয়নাল আবেদীন, সাইড ইঞ্জিনিয়ার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রমজান আলী মিলে কাজের অগ্রগতি না দেখে বিল পাশ করেন। প্রকল্পটি মূলত তেঁতুলিয়ার উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খানের অধীনে থাকলেও তিনি ১৫ জুন থেকে ছুটিতে গেলে ১৭-১৯ জুন পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রকৌশলী রমজান আলী অতিরিক্ত দায়িত্ব পান। দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিনের মধ্যেই তেঁতুলিয়ায় না এসেই তিনি একাধিক প্রকল্পের বিল পাশ করেন, যার মধ্যে এই প্রকল্পও রয়েছে।
একজন সার্ভেয়ার হয়েও জয়নাল আবেদীনের অধীনে অধিকাংশ রাস্তার কাজ থাকা এবং তাতে অনিয়ম বেশি হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এলজিইডির সার্ভেয়ার জয়নাল আবেদীন বলেন, “প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিল উত্তোলনের প্রক্রিয়া হয়েছে। কাজ শেষ করে ঠিকাদার বিল পাবেন। ১৭ থেকে ১৯ জুন এর মধ্যেই ওই রাস্তার বিল পাশ হয়েছে।”
তেঁতুলিয়ার প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান জানান, তিনি ১৫ জুন থেকে অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন এবং ২২ জুন অফিসে ফিরে জানতে পারেন, তার অনুপস্থিতিতে প্রকল্পের বিল পাশ হয়েছে।
অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী রমজান আলী জানান, তিনি তেঁতুলিয়ায় দায়িত্ব নিতে রাজি ছিলেন না, তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। বিল পাশের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঠিকাদার ইউসুফ আলী দাবি করেন, “কাজ না করেই কেউ বিল দেয়— এমন হয় না। অন্তত এলজিইডিতে কাজ না করে বিল দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
পঞ্চগড় জেলার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ জামান বলেন, “১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত উপজেলা প্রকৌশলী আইসিইউতে ছিলেন। ২২ জুন বিকেলে আইবাসে বিল দাখিলের সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও একদিন সময় বাড়ানো হয়। কাজ শেষ না করে চূড়ান্ত বিল আমরা কখনো দিই না, এটুকু আপনি লিখে রাখতে পারেন।”
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, “আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্পটি পরিদর্শন করব এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”
প্রতিবেদক - মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড়।