বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট তারল্যের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার ৬১১ কোটি টাকা, যেখানে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় তারল্য ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। ফলে নিট উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য ৮৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত ৩৩ হাজার ৯৭ কোটি টাকা। তবে ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৪৩৩ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ৬২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, প্রবাসী আয়ে এসেছে রেকর্ড সাফল্য। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। শুধু জুন মাসেই পাঠানো হয়েছে ২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ২৬ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পর বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বিনিয়োগে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। উচ্চ সুদের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঋণ নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, যার ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য বেড়ে গেছে।”
অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর রিসার্চ ফেলো এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, “রেকর্ড রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক ঋণের প্রবাহে দেশের রিজার্ভ বেড়েছে। হুন্ডি কার্যক্রম হ্রাস পাওয়ায় ডলারের বাজারে চাপ কমেছে। সব মিলিয়ে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সিগনাল।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০৩ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। জুনে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৭৭ পয়সা, যা আগের বছরের তুলনায় বেশি (১১৮ টাকা)।
এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগও ঊর্ধ্বমুখী। মে মাস পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “সরকার পরিবর্তনের পর অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারল্য বেড়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে, ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়েছে—সব মিলিয়ে এটি ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক সংকেত।”
জনপ্রিয়
পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...