Logo Logo

দিল্লিতে ‘বাংলাদেশে গণহত্যা’ ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংবাদ সম্মেলন স্থগিত


Splash Image

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ‘বাংলাদেশে গণহত্যা’ বিষয়ে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগ নেতাদের এক সংবাদ সম্মেলন শেষ মুহূর্তে স্থগিত করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


আয়োজকদের দাবি, ঢাকায় এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় বহু শিশুর মৃত্যুতে ‘শোক প্রকাশের জন্য’ অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে। তবে এই ঘোষণার পেছনে রাজনৈতিক কূটচাল ও কূটনৈতিক চাপের প্রশ্ন উঠেছে।

এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল ‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ (BHRW) নামে একটি সংগঠন। যদিও সংগঠনটির প্রকৃত অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, আয়োজক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী নিজেকে সংগঠনটির যুক্তরাষ্ট্র শাখার মহাসচিব হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রে শেখ হাসিনার পক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য পরিচিত এবং আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলেই বিভিন্ন মহলে বিবেচিত।

ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে দিল্লির একটি প্রাইভেট কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। মূলত গোপালগঞ্জে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং দেশের কিছু এলাকায় কথিত ‘গণহত্যা’ নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যেই এ সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হয়। আয়োজকরা দাবি করেন, এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী’ বক্তব্য রাখতেন।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে হাসান মাহমুদ, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মোহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সম্প্রতি দিল্লি সফর করেন এবং তাদের কয়েকজনের এ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

তবে সংবাদ সম্মেলনের ঠিক আগে এক বিবৃতিতে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী জানান, ঢাকায় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৩৫ জনের বেশি, যাদের বেশিরভাগই শিশু, নিহত হওয়ায় তারা অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছেন। তিনি বলেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজকের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।”

সিদ্দিকী আরও জানান, অনুষ্ঠানটি পরবর্তীতে নতুন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে তিনি বিমান দুর্ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পুরনো অভিযোগগুলো আবারও তোলেন।

দিল্লিতে বাংলাদেশ সরকারের ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্মেলনটি ঘিরে ঢাকার উদ্বেগ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছিল। সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এমন একটি বিতর্কিত সম্মেলন ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এছাড়া ভারতের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার কথা বলা হলেও—এই ধরনের রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সেই অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলে সতর্কতা জানানো হয়।

এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।

উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে টানা ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয় এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন নিয়ে ভারত উদ্বেগ জানায় এবং একাধিক বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

ফলে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে স্থল ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে জট দেখা দেয়, যার প্রভাব দুই দেশের বাণিজ্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

‘গণহত্যা’ ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই সম্মেলনের আয়োজন ও তা স্থগিতের সিদ্ধান্তকে কেউ কেউ শোকাবেগ হিসেবে দেখলেও, কূটনৈতিক মহলে এটিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। দিল্লিতে এমন সময় এ ধরনের আয়োজন, যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে—সেটি নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের জন্য ইঙ্গিতপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...