Logo Logo

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা ও স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে একমত রাজনৈতিক দলগুলো


Splash Image

অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ফাইল ছবি

রাজনীতিতে শাসনের সময়সীমা নির্ধারণ ও নিরাপত্তা খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নতুন দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দেশের ৩০টি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণ এবং একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব।


বিজ্ঞাপন


রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৯তম দিনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এদিন সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের কোনো প্রতিনিধিকে এই ধাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

সংলাপের প্রধান আলোচক এবং কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এই বিষয়ে প্রস্তাবিত খসড়া সনদেও তা সংযুক্ত করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা একবার বলেছি তো বলেছি—১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন না। এছাড়া সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ঠেকাতে একটি নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত বিধান সংবিধানে যুক্ত করতে হবে।”

এছাড়া সংলাপে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবও গৃহীত হয়, যার উদ্দেশ্য হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও পেশাদার, জবাবদিহিমূলক এবং নিরপেক্ষ রূপ দেওয়া।

কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন গঠিত হবে একজন অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতির নেতৃত্বে, যিনি ৭২ বছরের কম বয়সী হবেন। সদস্য সচিব হবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ৬২ বছরের কম বয়সী হবেন।

কমিশনের সদস্যদের মধ্যে থাকবেন: সরকার দলের নেতা (লিডার অব দ্য হাউস), বিরোধীদলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার (বিরোধীদলীয় প্রতিনিধি), একজন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী (কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা), একজন মানবাধিকার কর্মী (কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা), একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি।

কমিশনের অন্তত দুইজন সদস্য নারী হবেন। এছাড়া সদস্য নির্বাচনে সহায়তার জন্য একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে, যেখানে থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং একজন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক।

চেয়ারপারসন ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, আর বাকি সাতজন সদস্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী তারা সম্মানী ভাতা গ্রহণ করতে পারবেন। কমিশনের কাজ, সদস্যদের দায়িত্ব, অপসারণ, জবাবদিহিতাসহ অন্যান্য নীতিমালা একটি আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।

আলী রীয়াজ বলেন, “এটি শুধু একটি প্রশাসনিক সংস্কার নয়, বরং পুলিশি জবাবদিহিতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা নির্ধারণ এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেশজ রাজনীতিতে জবাবদিহিতা ও সীমিত ক্ষমতার চর্চাকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এখন দেখা যাক, এই ঐকমত্য বাস্তব রূপ নিতে কতটা সময় এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন হয়।

বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন

আরো দেখুন

পরবর্তী সংবাদ লোড হচ্ছে...